shono
Advertisement

Breaking News

IPL 2024

'মেলাবেন তিনি, মেলাবেন', তিক্ততার ইতিহাস ভুলে বন্ধুত্বের গল্প শেখাচ্ছে মহামিলনের আইপিএল

ইডেনে শাহরুখ-সৌরভের সাক্ষাৎ থেকে গম্ভীরের সঙ্গে কোহলি বা ধোনির আলিঙ্গন, এবারের আইপিএল নতুন বার্তা দিচ্ছে।
Posted: 05:49 PM Apr 30, 2024Updated: 09:27 PM Apr 30, 2024

অর্পণ দাস: লড়াই, যুদ্ধ, মোকাবিলা! আইপিএলের (IPL 2024) প্রতিটি ম্যাচের আগেই জুড়ে থাকে কত-শত বিশেষণ। কিন্তু সে তো বাইশ গজের জন্য। মাঠের সাফল্যের বাইরে কি নানা বন্ধুত্বের গল্পও থেকে যায় না? খেলার দিনগুলো ফুরিয়ে গেলে ভক্ত-সমর্থকরা মশগুল হয়ে থাকেন সাজঘরের গল্প শুনতে। কীভাবে তৈরি হয় একজন চ্যাম্পিয়ন? মানুষ হিসেবে ঠিক কীরকম দেখতে লাগে ভক্তের ভগবানকে?

Advertisement

অথচ গত কয়েক বছরের ঘটনা দেখে মনে হতেই পারে, বন্ধুত্বের সমীকরণের বদলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে প্রতিযোগিতা। মাঠের ভিতরে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের স্পর্ধা থেকে জন্ম নিচ্ছে তিক্ততা। কোটি টাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আসার পর যেন তা বেড়েছে। এতদিন যাঁরা ছিলেন 'টিম ইন্ডিয়ার' সদস্য, তাঁরাই এখন কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর প্রতিনিধি। বিনোদনের চড়া আলোয় গুলিয়ে যেতে পারে কার হাতে আছে টিমের ব্যাটন? নাহলে কে ভাবতে পেরেছিল শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) মালিকানায় কলকাতার দল থেকে বাদ পড়বেন খোদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)!

[আরও পড়ুন: কঠিন সময়েও ভরসা রাখলেন রোহিতরা, ভারতের বিশ্বকাপ দলে স্বমহিমায় হার্দিক]

২০০৮ সালে মহাসমারোহে যাঁরা এক মঞ্চে এসেছিলেন, তাঁদের পথ আলাদা হতেও খুব বেশি বছর লাগেনি। তার পর গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের শৈত্যপ্রবাহ কমেনি। ইডেনের 'ঘরের ছেলে' সৌরভ এখন দিল্লির মেন্টর। আইপিএলের প্লে অফে ওঠার লড়াইয়ে নাইটদের প্রতিপক্ষ। ম্যাচের আগের দিন প্র্যাকটিসেও হাজির ছিলেন দুজনে। অথচ দুজনের মধ্যে দেখা হল না। হয়তো দুই তারকাই অপেক্ষা করছিলেন ম্যাচের দিনের আরও বড় রোশনাইয়ের। ঠিক তাই ঘটল। সৌরভকে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলেন শাহরুখ। মহারাজের সঙ্গে দেখা হল কিংয়ের। ছেলে আব্রামকে জানিয়ে দিলেন, সৌরভ ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। দ্বিধাবিভক্ত আইপিএলের মঞ্চ যেন এর জন্যই এতদিন অপেক্ষা করেছিল।

এ তো না হয় মালিক-ক্রিকেটারের দ্বন্দ্ব। কিন্তু দেশের জার্সিতে যাঁরা এক সঙ্গে ঘাম ঝরিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখতে বোধ হয় কেউই রাজি নয়। এটা ঠিক যে, ক্রিকেট মহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চোরাস্রোত চিরকালই ছিল। এক বাড়িতে থাকলে সবার সঙ্গে সবার সুসম্পর্ক থাকবে, তা নাও হতে পারে। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধের ঘটনা কখন যে দেশের ক্রিকেটের অন্দরে ঢুকে গেল বোঝা যায়নি। সোশাল মিডিয়ায় তথাকথিত ভক্তদের উল্লাসধ্বনি দূরত্ব শুধু বাড়িয়েই গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পুষ্ট করেছে অনেকের ইগোকে। তার বাইরে এত বাগবিতণ্ডা থেকে কারওর কোনও লাভ হয়নি।

গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) সঙ্গে যে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) দূরত্ব রয়েছে, তা যে কোনও শিশুও জানে। এতদিন মাঠে তাঁদের ঝামেলা দেখতেই অভ্যস্ত ছিল ক্রিকেট মহল। ২০১৩ সালে গম্ভীর কেকেআরের অধিনায়ক থাকাকালীন প্রথম দুজনের গন্ডগোল শুরু হয়। দুজনেই তেড়ে যান একে-অপরের দিকে। গত মরশুমেও ম্যাচের শেষে প্রবল ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। একবার নয়, দুবার।

কিন্তু বেঙ্গালুরুতে কেকেআর ম্যাচের শেষে দেখা গেল অবিশ্বাস্য দৃশ্য। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তাঁরা যেন জানিয়ে দিলেন তিক্ততা সত্যিই অতীত। কলকাতার ফিরতি ম্যাচেও আড্ডা মারতে দেখা গেল দুজনকে। যা দেখে মনে পড়তে পারে ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের মধুর স্মৃতি। সেই ম্যাচে দুই দিল্লির ছেলে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে। আইপিএলে আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সি গায়েও যেন সেই মুহূর্তই ফের তৈরি হল। ঝামেলার নটে গাছের সঙ্গে নিন্দুকদের আলোচনার সমস্ত 'মশলা' ফুরিয়ে গেল।

[আরও পড়ুন: কেমন দেখতে বিরাট-অনুষ্কার পুত্র? ‘গোলুমোলু’ অকায়কে দেখার অভিজ্ঞতা জানালেন টিভি তারকা]

গম্ভীরের মুখে হাসি দেখা গেল আর একবার। চিপকে ধোনির (MS Dhoni) মুখোমুখি হওয়ার পর। কোনও দিন কথা কাটাকাটি হয়নি তাঁদের, কিন্তু একটা গুমোট হাওয়া সবসময়ই ছিল। ২০১১ থেকে চলা বিশ্বকাপ জয়ের 'কৃতিত্ব' নিয়ে চলা সমস্যাতেও বোধহয় বয়ে গেল মৃদুমন্দ হাওয়া। ম্যাচের শেষে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। এক ছক্কায় বিশ্বকাপ জেতানো যায় কিনা জানা নেই, তবে এক 'জাদু কি ঝাপ্পি'তে দশকব্যাপী বিতর্কের মুখ বন্ধ করা যায়।

তালিকা আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। সব মিলিয়ে চলতি আইপিএল যেন সব দূরত্ব ঘোচানোর দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এক মহামিলনের মঞ্চ হয়ে উঠেছে কোটি টাকার লিগ। লড়াই, যুদ্ধের বিশেষণের ফাঁক গলে রিনরিনে সুরে বেজে উঠছে বন্ধুতার সুর। খেলার মাঠের মন্ত্র তো এটাই। হারা-জেতার থেকেও বড় হয়ে ওঠে স্পিরিট। পাশে থাকার, কাঁধে-কাঁধ রেখে লড়াই করার, বন্ধু হয়ে ওঠার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • খেলার দিনগুলো ফুরিয়ে গেলে ভক্ত-সমর্থকরা মশগুল হয়ে থাকেন সাজঘরের গল্প শুনতে।
  • অথচ গত কয়েক বছরের ঘটনা দেখে মনে হতেই পারে, বন্ধুত্বের সমীকরণের বদলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে প্রতিযোগিতা।
  • চলতি আইপিএল যেন সব দূরত্ব ঘোচানোর দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
Advertisement