সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল এবার ইরানের প্রেসিডেন্টের আসনে কে বসবেন? আর মসনদে বসার দৌড়ে জোর টক্কর চলছে সংস্কারপন্থী নেতা মাসুদ পেজেস্কিয়ান ও চরমপন্থী নেতা সাইদ জালিলির মধ্যে। প্রথম দফার নির্বাচন ফলাফল ত্রিশঙ্কু হওয়ায় ভোটপ্রক্রিয়া গড়িয়েছিল দ্বিতীয় দফায়। আর এই ভোটেই জালিলিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন পেজেস্কিয়ান। যদিও শেষ সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসালামিক দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর হাতে। তবে এখন গোটা ইরান জুড়ে যেন বইছে নতুন হাওয়া।
গত ২৮ জুন, শক্রবার, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একদফা ভোটপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ইরানে। কিন্তু তার ফলাফল দাঁড়ায় ত্রিশঙ্কু। ইরানের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী জয়লাভ করার জন্য প্রার্থীকে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের কারও ঝুলিতেই সেই সংখ্যক ভোট পড়েনি। ফলে ৫ জুলাই শুক্রবার, ফের দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হয় সেদেশে। এদিন মোট ভোট পড়ে ৩ কোটি। যার মধ্যে চরমপন্থী জালিলির ঝুলিতে যায় ১ কোটি ৩০ লক্ষের উপর ভোট। কিন্তু তাঁকে পিছনে ফেলে ১ কোটি ৭০ লক্ষের উপর ভোট নিয়ে এগিয়ে যান সংস্কারপন্থী পেজেস্কিয়ান।
সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, আজ, শনিবার, দ্বিতীয় দফার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে ইরানের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোহসেন ইসলামি বলেন, এই দফায় ভোটারদের উপস্থিতি ৪৯.৮ শতাংশ। সংস্কারপন্থী নেতা পেজেস্কিয়ানের এগিয়ে থাকার কথা জানায় ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে দেশের প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নিয়ে শেষ কথা বলবেন সুপ্রিম লিডার খামেনেই। তবে তিনি নির্বাচনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে এই দ্বিতীয় দফার ভোটের আহ্বান জানান। খামেনেই জানান, "প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। এই প্রক্রিয়া নিয়মবিরুদ্ধ নয়।"
বলে রাখা ভালো, ইরানের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী জয়লাভ করার জন্য প্রার্থীকে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের কারও ঝুলিতেই সেই সংখ্যক ভোট পড়েনি। এদিন প্রথম দফার নির্বাচন শেষে দেখা যায় পেজেস্কিয়ান ৪২. ৫ শতাংশ ও জালিলি ৩৮. ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তৃতীয় হয়ে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থকে ছিটকে যান ইরানি পার্লামেন্টের স্পিকার মহম্মদ বাঘের ঘালিবাফ। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেননি কেউই। ফলে শনিবার নির্বাচন হয় ইরানে।
[আরও পড়ুন: ফের অসংলগ্ন বাইডেন, এবার নিজেকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা’ বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট]
উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধের ফলে আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বিরোধ এবং নানা নিষেধাজ্ঞায় বিধ্বস্ত অর্থনীতির মাঝেই ইরানে ভোট হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই ফিরে আসছেন কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনি। প্রায় দুবছর আগে নীতি পুলিশের মারে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। ‘ঠিক মতো’ হিজাব না পরাই ছিল অপরাধ! ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। দিকে দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল। যা নাড়িয়ে দিয়েছিল সেদেশের ‘মোল্লাতন্ত্র’কে। তীব্রতা কিছুটা কমলেও দেশজুড়ে এখনও চলছে হিজাব বিরোধী আন্দোলন। এমন বেনজির গণউত্থানের পর এবার নির্বাচনে সংস্কারপন্থী নেতার এগিয়ে যাওয়ার এই ছবি কিন্তু ইরান বসন্তের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।