সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নতুন বছরের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বঙ্গ সফর অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেল একাধিক কারণে। রাজনৈতিক কারণ বাদ দিলেও, অন্যতম চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বেলুড় মঠ অর্থাৎ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সদর দপ্তরে দেশের প্রশাসনিক প্রধানের রাত্রিযাপন। যা বেলুড়ের ইতিহাসে এই প্রথম। মোদির এই সফর আরও সমালোচিত হয়েছে, এই বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে বার্তা দিতে গিয়ে মোদি টেনেছেন CAA ইস্যু। কেন বেলুড়ের মঞ্চে এমন রাজনৈতিক প্রসঙ্গ? এই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
প্রশ্ন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক নেতার সংস্রব নতুন কিছু নয়। অনেকেই মিশনের শরণাপন্ন হয়েছেন। সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিরাও যাতায়াত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিরাও বিভিন্ন সময়ে এই তালিকায় ছিলেন। তাঁদের মিশন সফরের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই হয়নি। কারণ, প্রয়োজনও ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দের হাতে তৈরি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল, যে কোনওরকম রাজনীতিকে ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেওয়া। দেশের অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকা। দীর্ঘদিন ধরে সেই ভাবমূর্তিই বজায় ছিল মিশনের।
[আরও পড়ুন: ‘ঈশ্বর শুভবুদ্ধি দিক’, বন্দরের অনুষ্ঠানে নাম না করে মমতাকে বেনজির তোপ মোদির]
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এসে বেলুড় মঠের গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছেন, এমনটা মিশনের জন্মলগ্ন থেকে কখনও হয়নি। তাই প্রথমে যখন মোদির বেলুড়ে থাকার খবর প্রকাশ হয়, তখন অনেকেরই তা বিশ্বাস হয়নি। পরবর্তী সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীদের অনেকেই ইমেল করে, চিঠি লিখে, ফোনে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যাতে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।সেসব অনুরোধ রাখা হয়নি। মিশনে থাকা নিয়ে মোদি নিজে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, এখানে এসেছি ঘরের ছেলে হিসেবে।’ এদিন মিশন ও মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও সেই একই কথা জানালেন। বললেন, ‘ঘরের ছেলে ঘরে এসেছেন।’
বাস্তব কি তাই? এই নিয়ে হালকা গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল শনিবারই। রবিবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে বেলুড় মঠের মঞ্চ থেকে ছাত্র সমাজের প্রতি বার্তা দিতে গিয়ে যেভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গটি তুললেন এবং তা নিয়ে বললেন, তারপর অনেকেই মিশনের অন্দরে মোদির রাজনীতি প্রবেশের চেষ্টা নিয়ে মন থেকে সংশয় দূর করে দিয়েছেন। মোদির রাজনৈতিক বক্তব্য খুব ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি পড়ুয়াদের একাংশও। এক ছাত্র বিবেকানন্দের প্রতি মোদির যে শ্রদ্ধা এবং যেভাবে তাঁকে আদর্শ করে নিজের জীবনে এগিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা শিক্ষণীয় বলে মনে করলেও CAA প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়াই দিলেন না। স্পষ্ট বললেন, ‘মিশনের আদর্শ তো অরাজনৈতিক। তাই কোনও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলব না। তবে নিপীড়িত মানুষের পাশে সবসময় আমরা আছি, থাকব।’ রাজনৈতিক স্তরেও এ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র বিরোধিতা। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম – সকলেই একমত, বেলুড়কে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে মোদি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজের ছাপ রেখে গেলেন।
[আরও পড়ুন: ‘এখানে আসা তীর্থযাত্রার থেকে কম নয়’, বেলুড় মঠে মন্ত্রোচ্চারণের পর বললেন মোদি]
তবে এর আগে কখনও রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের নৈকট্য হয়নি, তা নয়। ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কোনও সরকারি অথবা দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে মিশনের বিশিষ্ট সন্ন্যাসীকে। কিন্তু এরপরও অবশ্য মমতা এবং মিশনের সম্পর্ক ঘিরে বিশেষ কোনও সমালোচনা হয়নি। তার কারণও মমতা নিজেই। অনেক কাছে থেকেও তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। তবে মোদি ‘ঘরের ছেলে’ হয়ে বেলুড়ে প্রবেশ করে যেভাবে বাকি কাজ করলেন, তাতে মিশন কর্তৃপক্ষকেও আদর্শ নিয়ে নিজেদের অনুগামীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, সেই সম্ভাবনা ক্রমশই জোরাল হচ্ছে।
The post রামকৃষ্ণ মিশনেও রাজনীতির প্রবেশ? বেলুড়ে মোদির CAA ভাষণ নিয়ে প্রশ্ন অনুগামীদেরই appeared first on Sangbad Pratidin.