সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মন্ত্র ও সংস্কৃত ভাষা। দুই-ই ওতপ্রোত জড়িয়ে। দীর্ঘ অভ্যাসে এই ধারণাই আমাদের মনে স্থায়ী। যে কোনও পূজার্চনাতে মন্ত্রপাঠ যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই আমরা জেনেছি যে, সে মন্ত্রের ভাষা সংস্কৃতই হয়ে থাকে। পুরোহিতরা পরম্পরা মেনে এখনও সংস্কৃতেই মন্ত্রোচ্চারণ করেন। এমন নয় যে, সেই সংস্কৃত মন্ত্রের অর্থ সকলের জানা। অনেক ক্ষেত্রে, পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় সাধারণ মানুষ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করতে গিয়ে সমস্যাতেও পড়েন, যেহেতু অধিকাংশ মানুষ এখন আর সংস্কৃত (Sanskrit) ভাষা ও তা উচ্চারণের চর্চা করেন না। তবু মন্ত্রের ঐতিহ্য যে সংস্কৃত ভাষাতেই যথাযথ মর্যাদা পায়, এই বিশ্বাসেই থিতু বহু মানুষ। আবার অনেকে মনে করেন, মন্ত্র উচ্চারণ সেই ভাষাতেই হওয়া উচিত, যে ভাষা সকলে জানেন, যে ভাষায় মন্ত্রের অর্থ স্পষ্ট হয়। অর্থাৎ দেবতার সামনে যা বলছি, তা যেন বুঝে বলা যায়। পাশাপাশি উচ্চারণও শুদ্ধ হয়। সেই দিক থেকে বাঙালির মন্ত্রোচ্চারণ বাংলা ভাষাতেই হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতেই 'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এর উদ্যোগ 'পুষ্পাঞ্জলি #ChantBangla'। কিন্তু বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ কি আদৌ সম্ভব? সংস্কৃত ভাষা থেকে সরে গেলে মন্ত্রের কি কোনও হানি হয় বা সংস্কৃতে মন্ত্রোচ্চারণ না করলে কি কোনও রকম দোষের সম্ভাবনা থাকে? এরই উত্তর দিলেন শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী (Nrisingha Prasad Bhaduri)।
''মন্ত্রের যে মাধুর্য, যা শুনে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি এককালে, সেই মন্ত্র তো এখন আর কেউ পড়েন না। সেটা বৈদিক মন্ত্র। যজ্ঞানুষ্ঠানে ব্যবহৃত বৈদিক মন্ত্রের যে জায়গা, তা ছেড়ে যখন পৌরাণিক কালে একজন পৃথক দেবতা এবং শুধু দেবতানির্ভর মন্ত্রগুলো তৈরি হল, সেগুলো তো বেদকে পাশে সরিয়ে রেখেই তৈরি হয়েছিল। যজ্ঞের বদলে পূজার পরিবর্তন হল, ফলত বৈদিক মন্ত্রেরও পরিবর্তন হল। এই বদলটা যখন হতে পেরেছিল, বৈদিক সংস্কারের বিধিবদ্ধ পরিসর ভেঙে যখন বেরনো সম্ভব হয়েছিল, তখন আমার মনে হয়, বাংলাতেই বা মন্ত্র উচ্চারণ করা সম্ভব হবে না কেন?'', জানালেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, মন্ত্রের যে পরিবর্তন তা বহুকাল আগেই হয়েছিল। বৈদিক যুগ থেকে পৌরাণিক যুগে মন্ত্রের বদল হয়েছিল সময়ের দাবি মেনে। সেই একই দাবিতে যদি আজ সংস্কৃতর পরিবর্তে কেউ বাংলায় (Bengali) মন্ত্র উচ্চারণ করেন, তা অসম্ভব কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু তাতে কি কোনও দোষের সম্ভাবনা থাকে? জবাবে নৃসিংহপ্রসাদ জানালেন, "দেবতা পাষাণ কিংবা কাঠের মধ্যে থাকেন না। ভাবের মধ্যেই দেবতা অধিষ্ঠান করেন। যার ফলে শুধু 'মা মা' বললেই যেখানে চলে, সেখানে বাংলায় যে মন্ত্র বলতে পারি, তাতে কোনও অত্যুক্তি হয় না। কোনও দোষ হয় না।''
[আরও পড়ুন: 'রাস্তা যেন বন্ধ না হয়', শ্রীভূমির পুজো উদ্বোধনে সুজিতকে 'ঘ্যাচাং ফুঁ' করার হুঁশিয়ারি মমতার]
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে তিনি জানালেন, "দোষটা হবেই বা কোথায়? আমি তো আর্তির মধ্যে ভগবানকে দেখতে পাচ্ছি। সংস্কৃত শব্দ যখন আমরা উচ্চারণ করি, সেই উচ্চারণ তো ঠিক হচ্ছে না। উচ্চারণ যদি কেউ ঠিকও করেন, তাতে কি তাঁরা দেবতাকে নামিয়ে আনতে পারছেন? আমি তা মনে করি না। শব্দগুলো উচ্চারিত হচ্ছে, অথচ তার অর্থ জানি না। যে শব্দের আমি অর্থই জানি না, তা উচ্চারণ করে লাভ কী? দুর্গার মন্ত্র 'শরণ্যে ত্র্যম্বকে' আমি বললাম, অথচ জানি না যে কী বললাম। আমি মনে করি, ওটা যদি বাংলায় বলা হয়, তবে একজন বাঙালির দেবীর কাছে নিজের ভাব সমর্পণ করতে অনেক বেশি সুবিধা হয়। এটাতে দোষের কোনও সম্ভাবনাই নেই। বাংলা ভাষায় মায়ের কাছে যদি তুমি নিজের আর্তি জানাতে পারো, সেটাই সবথেকে বড় কথা। সেটাই সব থেকে বড় মন্ত্র।"
[আরও পড়ুন: PFI-এর ডেরায় তল্লাশির পরেই বৈঠকে ডোভাল-শাহ, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চান রাহুল]
বিশ্ব জুড়ে তাই বাঙালি এবার পুজোয় অঞ্জলি দেবে বাংলাতেই। মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন স্বয়ং নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, সঙ্গে আছেন পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar) ও কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। এই উদ্যোগে শামিল হোন আপনিও। পাশে থাকুন এই উদ্যোগের। আপনার এলাকার পুজো কমিটিকে বাংলা মন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি আয়োজনে উৎসাহিত করুন। বাংলা মন্ত্র ডাউনলোড করতে এবং 'সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল'-এর উদ্যোগ 'পুষ্পাঞ্জলি #ChantBangla' বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন: chantbangla.org
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর পুরো বক্তব্য শুনে নিন: