সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতির বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে প্রশাসন৷ পাল্টা রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন বরকতি৷
[আর ইমাম নয় বরকতি, ঘোষণা টিপু সুলতান মসজিদ কর্তৃপক্ষের]
নয়া কেন্দ্রীয় আইন অমান্য করে গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে ঘোরার অভিযোগ ওঠে বরকতির বিরুদ্ধে৷ কিন্তু ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত শনিবার বরকতির গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলা হয়৷ শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী তথা জামিয়াত উলেমা-এ-হিন্দ প্রধান সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “বরকতি সাহেবকে মনে রাখতে হবে উনি ইমাম, আর আমি রাজ্য সরকারের মন্ত্রী৷ নির্দেশ পেলে ওনার গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলতে এক মিনিটও লাগবে না৷”
[প্রবল চাপের মুখে গাড়ি থেকে লালবাতি খুললেন বরকতি]
কেন্দ্রীয় আইন অগ্রাহ্য করে গাড়িতে লালবাতি লাগানো ও বরকতির দেশবিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে এদিন ধর্মতলায় টিপু সুলতান মসজিদের বাইরে পথসভা করছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি৷ ওই সভা থেকে উলেমা-এ-হিন্দ নেতৃত্ব বার্তা দেয়, বরকতির মতো যাঁরা দেশের বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রতি সমব্যথী, তাঁরা যেন পাকিস্তানে চলে যায়৷ ভারতের একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও দেশের অখণ্ডতার উপর আঘাত নেমে আসতে দেবেন না৷ এ রাজ্যের মুসলিমরা এ দেশের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি৷ যে শিক্ষা স্বামী বিবেকানন্দ দিয়েছেন, যে শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন, সেই শিক্ষা এ রাজ্যের হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বার্তা শিখিয়েছে৷
ওই সভায় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বক্তব্য পেশ করার সময় তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে বরকতি সমর্থকদের হাতাহাতি লাগে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই৷ ওই সভা চলাকালীন বরকতি টিপু সুলতান মসজিদে ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেন সিদ্দিকুল্লাহর সমর্থকরা৷ সেই সময় বরকতিও সিদ্দিকুল্লার উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেন৷ তখনই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়, লেগে যায় হাতাহাতি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অশান্তি থামায়৷ বরকতিকে মসজিদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে। এই ঘটনার পর বরকতি বউবাজার থানায় সিদ্দিকুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন৷ তাঁর অভিযোগ, সিদ্দিকুল্লাহ ও তাঁর সমর্থকরা বিকেল পাঁচটা নাগাদ টিপু সুলতান মসজিদের সামনে শান্তি শৃঙ্খলাভঙ্গ করেন৷
একের পর এক ফতোয়া জারি, বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলিম সমাজকে খেপিয়ে তোলা ও কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করে বিতর্ক বাড়ানোয় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ৷ বরকতিকে ইমামের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করল মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড৷ ইতিমধ্যেই বরকতিকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে শনিবার জানানো হয়েছে৷ বরকতির বিরুদ্ধে নকল তালাকনামা বানানোর অভিযোগ রয়েছে৷
[বরকতিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৫ মে লালবাজার অভিযান বিজেপির]
নয়া কেন্দ্রীয় সরকারের আইনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বরকতি জানিয়ে দেন, তিনি তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি খুলবেন না৷ অথচ চলতি মাস থেকেই দেশ জুড়ে নির্দিষ্ট কয়েকজন ভিভিআইপি ছাড়া কোনও গাড়িতে লালবাতি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মোদি সরকার৷ ‘বাবু কালচার’-এ রাশ টানতেই এই উদ্যোগ কেন্দ্রের৷ কিন্তু বরকতি হুঁশিয়ারি দেন, এ রাজ্যে কেন্দ্রের আইন চলে না। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছেন। মোদির জন্য তিনি গাড়ি থেকে লালবাতি সরাবেন না।
[বিজেপির হয়ে কাজ করলে মুসলিমদের ধোলাইয়ের নিদান বরকতির]
এখানেই থেমে না থেকে কলকাতার ইমাম বরকতি আরও দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ার কথা জানেন। কিন্তু তিনি আপত্তি করেননি। কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বে়ড়ানোর জন্য বরকতিকে গ্রেপ্তার করার দাবি তোলে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-কে তাঁর একান্ত প্রতিক্রিয়ায় জানান, বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার জন্যই বরকতিকে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর আগে বরকতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন, ভারত-বিরোধী বক্তব্য প্রকাশ্যে পেশ করেন বলে অভিযোগ করেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত হুঙ্কার দিয়ে জানায়, প্রশাসন ও পুলিশ বরকতিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাঁরাই ওই সংখ্যালঘু নেতাকে তুলে লালবাজারে দিয়ে আসবেন। ঘরে-বাইরে চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য শনিবার গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলতে বাধ্য হন বরকতি৷
দেখুন ভিডিও:
[ইমাম বরকতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের]
The post বরকতি-সিদ্দিকুল্লাহ সমর্থকদের হাতাহাতিতে রণক্ষেত্র টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর appeared first on Sangbad Pratidin.