বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: আরজি কর কাণ্ড এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়ছেন জহর সরকার। রাজনীতির ময়দান থেকেই বিদায় নিচ্ছেন তিনি। চিঠি লিখে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন নেত্রীকে। আগামী সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসবেন জহরবাবু।
রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে তিন বছর কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জহর। তবে একই সঙ্গে দুর্নীতি, আরজি কর-সহ একাধিক ইস্যুতে দলের তথা নেত্রীর অবস্থান নিয়ে সরবও হয়েছেন। প্রাক্তন ওই আমলার বক্তব্য, আর জি কর কাণ্ডের পর বাংলার সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অনাস্থা। এই বিপুল দীর্ঘ কর্মজীবনে অনাস্থা আগে দেখেননি তিনি। সরকার তথ্যমূলক কোনও বক্তব্য পেশ করলেও মানুষের কাছে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, "আমি একমাস ধৈর্য ধরে আর জি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখেছি, আর ভেবেছি আপনি কেন সেই আগের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না!"
[আরও পড়ুন: ভারতে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা! ‘এদেশ ছাড়তে হলে মরেই যাব’, বলছেন লেখিকা]
২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকারকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। কিন্তু গত তিন বছরে একাধিক বার দলের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দুর্নীতির অভিযোগে যখন গ্রেপ্তার হলেন, তখনও প্রতিবাদ করেন জহর। কিন্তু সেটার পরও তাঁকে দলের সিনিয়র নেতারা হেনস্তা করেছেন বলে দাবি প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইওর। দলের একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরও নেত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জহরের বক্তব্য, "সেসময় আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম এই ভেবে যে আপনি কাটমানি এবং আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেটা চালিয়ে যাবেন।" চিঠিতে তিনি আক্ষেপের সুরে লেখেন, "আমি আমার কর্তব্য পালন করলাম। কিন্তু রাজ্যে দুর্নীতি এবং দলের একাংশের নেতাদের দাপট দেখে আমি হতাশাগ্রস্ত হলাম। দেখলাম রাজ্য সরকার সেটা সামলাতেও পারছে না।"
[আরও পড়ুন: সিরাজদৌল্লা নয়, ভোগবিলাসে মত্ত এই মোঘল সম্রাটই খাল কেটে ব্রিটিশদের ভারত আনেন]
জহরের ইস্তফা সম্পর্কে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, জহরবাবু একজন সিনিয়র, বিদগ্ধ মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমরা তাঁর বিরোধিতা করব না। তাছাড়া আমার মনে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধার জায়গা, সেটা তিনি ছিন্ন করছেন না।" কুণালের বক্তব্য, "জহরবাবু যে উদ্বেগের কথা বলছেন, সেই উদ্বেগের সঙ্গে তৃণমূলের অনেক সৈনিক একমত। দলের কাছে দৃশ্যমান, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সেটা দলের অন্দরে থেকেও।" আর জি কর কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের আর এক রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ইতিমধ্যেই মুখর। এবার জহর সরকারের সরাসরি পদত্যাগ। স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা অস্বস্তিতে শাসকদল। তবে জহর সরকার কোনওদিনই সেভাবে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তৃণমূল স্তরেও তাঁর ইস্তফার বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছে শাসক শিবির।