আকাশ মিশ্র: ‘জয়েশভাই জোরদার’ শুরু থেকেই উদ্দেশ্য নিয়ে ভীষণ স্পষ্ট, এই ছবি মেয়েদের কথা বলে, নারী স্বাধীনতার কথা বলে, কন্যাভ্রুণ হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলে। তবে এসব সামাজিক ব্যধিকে তুলে ধরতে এবং তার প্রতিকার বোঝাতে পরিচালক সাহায্য নিয়েছেন কমেডির। পরিচালক কী সফল হয়েছেন? না, পরিচালক একেবারেই সফল হননি। কারণ, ‘জয়েশভাই জোরদার’ (Jayeshbhai Jordaar) ছবির উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেও, তাঁকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথটা একেবারেই বেঠিক। কমেডির নামে এই ছবিতে যা রয়েছে তা খুবই মোটা দাগের এবং পুরনো ছকে ফেলা। যার ফলে ছবিতে এমন একটাও দৃশ্য নেই, যা কিনা আপনাকে হাসাতে পারবে কিংবা চমক দিতে পারবে। এক কথায়, গোটা ছবিটাই অত্যন্ত প্রেডিক্টেবল।
গল্পটা একটু বলা যাক। প্রবীণ নগরের সরপঞ্জ হলেন রণবীর সিং (Ranveer Singh) ওরফে জয়েশভাই। তাঁর বাবা বোমান ইরানি (Boman Irani) ওরফে রামলালের একটাই ইচ্ছে, জয়েশভাইয়ের যেন একটি ছেলে হয়। তবেই তো বংশ বাড়বে। অন্যদিকে জয়েশভাই লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আগে থেকেই জেনে নিয়েছে এবারও তার মেয়ে হবে। এই মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখার ও সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখানোর লড়াই দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। সঙ্গে ফ্রেমে ফ্রেমে নারী স্বাধীনতা, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর মতো ইস্যুকে টেনে আনা। আর এই বিষয়কে আরও জোরদার করতে হরিয়ানার ইস্যু (হরিয়ানাতে কন্যাভ্রুণ হত্যার ঘটনা দেশের মধ্য়ে সবচেয়ে বেশি) টেনে এনেছেন পরিচালক।
[আরও পড়ুন: ছবি জুড়ে শুধু সোহমের ম্যাজিক, জমল কি ‘কলকাতার হ্যারি’? ]
ছবির গল্প হিসেবে এরকম একটি বিষয় বেছে নেওয়ার জন্য অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিত পরিচালককে। তবে বিষয়টাকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে গিয়েই গণ্ডগোল করে ফেললেন তিনি। কন্যাভ্রুণ হত্যা, নারী স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে দুর্বল কমেডির ধাঁচে ফেলতে গিয়েই আবেগহীন করে ফেললেন। ফলে ‘জয়েশভাই জোরদার’ না হল কমেডি, না হল সামাজিক বার্তা দেওয়ার ছবি। একই ছবিতে একাধিক ইস্যু টেনে এনে খিচুড়ি বানিয়ে ফেললেন পরিচালক দিব্যাঙ্ক।
এই ছবির স্টারকাস্ট কিন্তু বেশ জোরদার। রণবীর সিং ছাড়াও বোমান ইরানি, রত্না পাঠক, পুনিত ইশারের মতো অভিনেতা রয়েছেন। নতুন অভিনেত্রী শালিনী পাণ্ডেও বেশ ভাল। তবে এত ভাল অভিনেতাদের নিয়েও দুর্বল চিত্রনাট্যর ফলে ‘জয়েশভাই জোরদার’ অত্যন্ত মাঝারি মাপের ছবিই হয়ে দাঁড়াল।
এই ছবি একমাত্র দেখা যায় রণবীর সিংয়ের জন্য। তিনিই এই ছবির একমাত্র স্ট্রং পয়েন্ট। কমেডিতেও যে তিনি বেশ সাবলীল তা বুঝিয়েছেন প্রত্যেকটি দৃশ্যে। তবে এই ছবি একেবারেই আবগশূন্য। তাই কোন দৃশ্যই মন ছুঁয়ে যেতে পারে না। ‘জাদু কি ঝপ্পির’ স্টাইলে এই ছবিতে ‘পাপ্পি’ শব্দর ব্যবহার হলেও, দুর্বল উপস্থাপনের ফলে তা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ে।