সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মাওয়ের আমল থেকেই ‘বন্দুকের নলে’ ভরসা করে আসছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। তিয়ানআনমেন স্কোয়ার থেকে গালওয়ান পর্যন্ত প্রতিফলন ঘটেছে সেই নীতিরই। তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (LAC) এবার কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সীমান্তে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে শেষে বেকায়দায় পড়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট। নয়াদিল্লির কড়া মনোভাব ও সীমান্তে ভারতীয় ফৌজের পাটকেল খেয়ে রীতিমতো কোণঠাসা শি। ভারত যে এভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেবে তা আঁচ করতে পারেননি। ফলে জোর ধাক্কা খেয়েছে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। এমনটাই মনে করছেন মার্কিন সাংবাদিক ও টিভি কমেন্টেটর গর্ডন জি চ্যাং।
[আরও পড়ুন: ধর্ষকদের কেমিক্যাল দিয়ে নপুংসক করে দেওয়া উচিত, মত ইমরান খানের]
‘নিউজ উইক’ পত্রিকায় চিনা প্রেসিডেন্টকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন চ্যাং। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “লাদাখে আগ্রাসনের ছক কষেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং (Xi Jinping ) নিজে। এটা পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা না ঘটলেও জিনপিং এই সামরিক আগ্রাসন চালাতেন। কারণ এটা কমিউনস্ট পার্টির আধিপত্যবাদের পুরনো ছক। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে ডোকলামে, পরে দক্ষিণ হিমালয়ের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে জমি দখলের ছক কষেছেন জিনপিং। আগ্রাসী জিনপিং ভুটানের সাকেতং অভয়ারণ্য, ভারতের লাদাখে, সিকিমে ও অরুণাচল প্রদেশে, মায়ানমারের উত্তরাংশেও জমি দখলের ছক কষেছেন। নেপালেরও কয়েক শো বর্গকিলোমিটার জমি জবরদখল করে বসে আছে চিন। এতেও ড্রাগনের খিদে মিটছে না। পারলে পুরো এশিয়াটাকেই গিলে খেতে চান ড্রাগন সম্রাট জিনপিং।”
৬০ বছর বয়সী চিন বিশেষজ্ঞা চ্যাং বলেছেন, “গালওয়ানের সংঘর্ষেই প্রমাণিত, লাদাখে জিনপিংয়ের আগ্রাসনের ছক সুপারফ্লপ। এটা জিনপিং এবং লালফৌজ কল্পনাও করতে পারেনি। ভারতের বিরুদ্ধে সুপারফ্লপ হয়েছে জিনপিংয়ের পরিকল্পনা। আমার কাছে পাকা খবর আছে, গালওয়ানে অন্তত ৬০ জন চিনা সেনা নিহত হয়েছিল। এ ব্যাপারে ভারতীয় সেনাদের দাবি সত্যি। লজ্জা ঢাকতে পুরোটাই চিন চেপে গিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘হিংস্র প্রতিরোধ’ (ফেরোসাস রেজিস্ট্যান্স) এবং ‘অফেন্সিভ ডিফেন্সের’ কৌশলের কাছে জিনপিং হেরে গিয়েছেন। পিএলএ’র স্টাডি গ্রুপ ভারতীয় সেনাদের নিয়ে বেশি পড়াশোনা না করেই মিস অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়েছিল। উল্টে চিনাদেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য চিন গত ৭০ বছরে রাশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গেও যুদ্ধেও জিততে পারেনি।”
কটাক্ষের সঙ্গে সঙ্গে চ্যাংয়ের হুঁশিয়ারি, “কিন্তু এটাও নিশ্চিত থাকুন ভারতের বিরুদ্ধে এবার আরও বড় আকারে হামলা ও আগ্রাসন চালাবে চিনা সেনা। এটাই ওদের ধর্ম। কারণ ভারতের মনোবল ভাঙতে না পারলে জিনপিংয়ের ব্যবসা লাটে উঠবে। ব্যবসার নাম ‘ওবোর’ (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) প্রকল্প। দুনিয়া জুড়ে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ তৈরির করতে ওবোরই হাতিয়ার চিনের। ভারত প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।” গর্ডন চ্যাং লিখেছেন, “জিনপিং নিজেও বুঝতে পারছেন তাঁর লাদাখ দখলের পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই এবার পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপালকে নিয়ে জোট গড়ে ভারতের বিরুদ্ধে সেই জোটকে লেলিয়ে দিতে চাইছেন তিনি। এজন্য ওই তিন দেশের বিদেশমন্ত্রী ও আমলাদের নিয়ে বার বার ভারচুয়াল বৈঠকও করেছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।”
উল্লেখ্য, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্দরে জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে ক্রমে অসন্তোষ বাড়ছে। দুর্নীতি দমনের নামে বেছে বেছে বিরোধীদের জেলে পাঠিয়েছে প্রেসিডেন্ট শি। আর এতেই রীতিমতো অশনিসংকেত দেখছেন অন্য নেতারা, এছাড়া হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের তুমুল বিক্ষোভ ও করোনা মহামারী নিয়েও দেশেই অনেকের বিরাগভজন হয়ে উঠেছেন জিনপিং। এহেন সময়ে চিনা জাত্যাভিমান উসকে দিতে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার ছক কষেন শি। কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ধর্ষকদের কেমিক্যাল দিয়ে নপুংসক করে দেওয়া উচিত, মত ইমরান খানের]
The post লাদাখের সংঘাতে জোর ধাক্কা খেয়েছে জিনপিংয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ: রিপোর্ট appeared first on Sangbad Pratidin.