কৃষ্ণকুমার দাস: অবশেষে ইচ্ছে পূরণ হল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu)। প্রথমে গ্রন্থাগার তৈরি। এবার তাঁর পৈতৃক বাসস্থান ঘিরে ‘বারদি পর্যটন কেন্দ্র’ চালু করল শেখ হাসিনা সরকার।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ বারদি গ্রামের এই বাড়িতে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন প্রয়াত বাম নেতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনবার এই গ্রামে এসেছিলেন তিনি। নিজের পৈতৃক ভিটেয় একটি লাইব্রেরি ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক, চেয়েছিলেন তিনি। প্রয়াত বাম নেতার এই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে ছ’বছর আগে পাবলিক লাইব্রেরি ও জাদুঘর তৈরি হয়েছিল। রবিবার ‘পর্যটন কেন্দ্র’ চালু করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এদিন এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন।
[আরও পড়ুন: শাশুড়ি-জামাইকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় হাতেনাতে ধরলেন মেয়ে! উঠল সামাজিক বয়কটের ডাক]
কলকাতায় স্কুলে পড়ার সময়েও ছুটি পড়লেই ওই বাড়িতে যেতেন বাবা ডাঃ নিশিকান্ত বসুর সঙ্গে। থাকতেন দোতলার উত্তর দিকের কোণার ঘরে। এখনও সেই ঘরে পারিবারিক ছবিতে স্বয়ং জ্যোতি বসুর ছবি জ্বলজ্বল করছে। বারদিতে থাকার সময় স্নান, খাওয়া-দাওয়া এবং আদর-যত্ন-সহ সমস্ত দায়িত্ব পালন করতেন আয়তুন্নেচ্ছা বিবি। ১৯৮৭-তে শুধু ওই আয়ুতুন্নেচ্ছার সঙ্গেই দেখা করতে নদী-পথ পেরিয়ে সোনারগাঁয় পা রেখেছিলেন জ্যোতিবাবু। আয়তুন্নেচ্ছা বিবি বেশ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। এখন তাঁর ছোট মেয়ে হাজেরা বিবি জ্যোতি বসুর পৈতৃক ভিটে এবং লাইব্রেরি দেখভাল করেন। পর্যটন কেন্দ্র উদ্বোধনে তিনিই এদিন মুখ্য ভূমিকা নেন এবং জ্যোতি বসুর বারদি সফরের স্মৃতিচারণ করেন। কলকাতা থেকে মোবাইল ফোনে হাজেরা বিবিকে প্রশ্ন করতেই জানালেন, “জ্যোতি দাদুর শেষ ইচ্ছা অনেকটাই পূরণ হল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রথমে লাইব্রেরি, এখন পর্যটন কেন্দ্র চালু হল। তবে ওঁর ব্যবহার করা কিছু জিনিসপত্র পেলে খুব ভাল হত। মানুষ জাদুঘরে এসে তো ওঁর বইপত্র পড়ছেন, সংগ্রামী জীবনের ছবি দেখছেন। কিন্তু ওই মাপের একজন জননেতার হাতের ছোঁয়া পাওয়া কিছু সামগ্রী থাকলে ভাল হত।”
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রয়াত পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা একবার ‘পথের পাঁচালি’ সংস্থার তরফে এসে কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে দাবি হাজেরা বিবির। লাইব্রেরিতে উল্লেখ করা আছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কলকাতায় বৈঠকে বসে তাঁদের উৎসাহিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনে এসে শেখ হাসিনা জ্যোতি বসুর পৈতৃক ভিটে ঘিরে বারদি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা করেন। তাঁরই নির্দেশে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। দু’তলা ভবনে দু’টি এসি রুম, রেস্তরাঁ, স্যুভেনিয়ার শপ, পিকনিক শেড এবং কার পার্কিং ও অন্যান্য সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনবার ১৯৮৭, ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। পর্যটন কেন্দ্র উদ্বোধনে এসে একথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ আলি ফারুক ও বারদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল। জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে লোকনাথ বাবার সমাধি ক্ষেত্র। বারদি মন্দিরের সম্পাদক শংকর কুমার দে জানান, “ভারত থেকে যাঁরাই লোকনাথ বাবার সমাধিক্ষেত্রে আসেন তাঁরা সবাই একবার করে জ্যোতিবাবুর পৈতৃক ভিটে দেখে যান। এই পর্যটন কেন্দ্র তাঁদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ হবে।”