সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গোৎসবের পর এবার দীপাবলির আনন্দেও মেতে উঠেছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। রাজধানী ঢাকাতেই অবস্থিত জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী। মূলতঃ কালীপুজো (Kali Puja) উপলক্ষ করে সর্বপ্রথম তৈরি হয় এই মন্দিরটি। পরবর্তী সময়ে দুর্গাপুজো-সহ নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হয়। বেশ বড় করে শ্যামাপুজো উদযাপিত হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। ঢিল ছোড়া দূরত্বে শাঁখারি বাজার, তাঁতি বাজার ও সূত্রাপুরেও বেশ ঘটা করে পুজো হয়। ঢাকার রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, রাজারবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে কালীপুজোর জাঁকজমক দেখার মতো। পোস্তগোলা জাতীয় মহাশ্মশানে পাঁচশো বছর ধরে কালীপুজো হয়ে আসছে।
কালীপুজোর দিন ফানুস ওড়ানো থেকে প্রদীপ জ্বালানো, ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা হয় এখানে। এসব নিয়েই দীপাবলির (Diwali) আনন্দে মাতেন রাজধানীবাসী। সতীর দেহের ১০৮ টির মধ্যে একটি ঢাকেশ্বরী শক্তিপীঠ, যেখানে দেবীর চূড়ামণি পড়েছিল। এই করেই গঙ্গার (Ganga) তীরে দেবীর আবির্ভাব হয়। দেবী অনেক কাল বুড়িগঙ্গার তীরের এই জঙ্গলে সুপ্ত ছিলেন। নিজের প্রকাশ তো দূরে থাক, নিজের অস্তিত্বটাও কাউকে বুঝতে দেন নি।
[আরও পড়ুন: ‘এজেন্সির সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেকে ঠিক রাখতে হবে’, তৃণমূলকে ‘পাঠ’ অর্জুনের]
কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজা আদিসুর তার এক রানিকে বুড়িগঙ্গার এক জঙ্গলে নির্বাসন দেয়। জঙ্গলে রানি প্রসব করেন পুত্র বল্লাল সেনকে। এ সময় দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রানি। সেই মতো তিনি জঙ্গলের মাঝে গিয়ে ঝোপের মধ্যে ঢাকা অবস্থায় দেবীর মহিষাসুরমর্দিনী বিগ্রহ উদ্ধার করেন এবং দেবীর নিত্যসেবার ব্যবস্থা করে যান। সিংহাসনে আরোহনের পর বল্লাল সেন তাঁর জন্মস্থানকে মহিমান্বিত করার জন্য এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।অন্য এক কিংবদন্তী যে বল্লাল সেন একবার জঙ্গলে আচ্ছাদিত দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বল্লাল সেন সেখানে দেবীকে আবিষ্কৃত করেন এবং একটি মন্দির নির্মাণ করান, বিগ্রহটি ঢাকা ছিল বলে ‘ঢাকেশ্বরী’ নামকরণ হয়।
[আরও পড়ুন: আর দুয়ারে সরকারের অপেক্ষা নয়, সারা বছরই আবেদন করা যাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য]
দেশ ভাগের সময় বাংলাদেশের অনেক হিন্দুদের ভিটেমাটি হারাতে হয়। বাদ পড়েননি ঢাকেশ্বরীর সেবকেরাও। দেশভাগ-পরবর্তী দাঙ্গার সময় সম্ভাব্য আক্রমণ এবং লুণ্ঠনের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করতে ঢাকার মূল বিগ্রহটিকে গোপনে এবং দ্রুততার সঙ্গে ১৯৪৮-এ কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন রাজেন্দ্রকিশোর তিওয়ারি (মতান্তরে প্রহ্লাদকিশোর তিওয়ারি) এবং হরিহর চক্রবর্তী। কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দু’বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরীর বাড়িতে দেবী পূজিতা হন। ৮০০ বছরেরও প্রাচীন বিগ্রহটি এখন কলকাতার (Kolkata) ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরেই আছে, বর্তমানে ঢাকায় যেটি আছে সেটি একটি রেপ্লিকা।