অর্ণব দাস, বারাসত: হলিউড সিনেমার আস্ত সেট যেন! জীবজন্তুর মডেল, ঝর্ণা - মনে করিয়ে দিচ্ছে 'জুমানজি' সিনেমার কথা। তবে এখানে কোনও শুটিং হচ্ছে না। এ নিছক এক মণ্ডপসজ্জা। কালীপুজোর জন্য বিখ্যাত বারাসতে প্রস্তুতি তুঙ্গে। এবারের আলোর উৎসবে থিমের ছড়াছড়ি। তারই মধ্যে চোখে পড়ল টাকি রোড সংলগ্ন শতদল পুজো কমিটির এই 'জুমানজি' মণ্ডপে। এবছর তাদের পুজোর বয়স ৫৬ বছর। থিম বিখ্যাত এই হলিউড সিনেমা। তিনভাগে সাজানো হচ্ছে থিমের পুজোটি। উদ্যোক্তাদের দাবি, মণ্ডপের দুটি ঝর্ণা দর্শনার্থীদের বিশেষ নজর কাড়বে। মন জয় করবে। মণ্ডপের প্রবেশ করলেও বাইয়ের অংশে পাহাড় কেটে তৈরি ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে বইবে একটি ঝর্ণা। মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশের পর প্রতিমা দর্শনের সময় পিছনে দেখা যাবে আরও একটি ঝর্ণা।
এবছর কালীপুজো ও দীপাবলিতে ধর্মীয় স্থল, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের আদলে মণ্ডপ তৈরির পাশাপাশি এই শহর দর্শনার্থীদের জন্য অভিনব সব থিম নিয়ে হাজির হতে চলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে 'বিশ্ব শান্তির বার্তা' থেকে 'লক্ষ্য' থিমের সঙ্গে হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা 'জুমানজি' ফুটিয়ে তুলতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
থিমের ছড়াছড়ি বারাসতের কালীপুজোয়। নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদরের থিমের কালীপুজোগুলির মধ্যে এবছরের অন্যতম আকর্ষণ 'আলোর দিশারী'। বারাসত দমকল কেন্দ্র লাগোয়া তরুছায়া ক্লাব এই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের বঞ্চনা, দারিদ্র, মানসিক অশান্তির কথা। অস্থির পরিস্থিতির এই বাস্তবতার মধ্যেও থিমে একইসঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে মানবিকতা, সহানুভুতিও। থিমের সঙ্গে সাজুয্য রেখে তৈরি হচ্ছে মাতৃ প্রতিমা। আলোকসজ্জার মাধ্যমেও অন্ধকার থেকে আলোর পথ তুলে ধরার ভাবনা ভেবেছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা রূপায়ণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, "প্রেরণা জোগাতেই এই থিমের ভাবনা। মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে থাকবে লড়াইয়ে শক্তি জোগানোর মুহূর্ত। মণ্ডপে এলে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা পাবেন দর্শনার্থীরা।"
বারাসতের জনপ্রিয় পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম পাইওনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাব। বারাসত রেল স্টেশন লাগোয়া এই পুজো কমিটির ৫২ তম বর্ষের ভাবনা 'লক্ষ্য'। লক্ষ্যহীন জীবন, গন্তব্যহীন জাহাজের মতো - এই ভাবনা থেকেই থিমটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তারা। লক্ষ্যে পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে জীবনমুখী লড়াই থিমের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে মণ্ডপে থাকছে - সাপলুডো। সাপের মুখে পড়লেই পতন অনিবার্য আর মই বেয়ে তরতরিয়ে উঠতে পারলে সোজা শীর্ষস্থান। জীবনে এগনো-পিছনো, উত্থান-পতনের নানা কৌশল দেখা যাবে মণ্ডপে। উদ্যোক্তাদের দাবি, নজরকাড়া মাতৃপ্রতিমা তাদের অন্যতম আকর্ষণ। সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। নিজস্ব চিত্র।
'বিশ্বশান্তির বার্তা' দিতে ৬৬তম বর্ষে বারাসতের ন'পাড়া পুরোনো কাঠগোলার শক্তি মন্দির তাদের থিম তৈরিতে ব্যস্ত। থিমটি মূলত তৈরি হচ্ছে তুলো ও স্পঞ্জ দিয়ে। শান্তির বার্তা দিতে মণ্ডপের সামনে থাকছে বিশাল আকৃতির একটি সাদা পায়রা, পাশে রাখা থাকবে দুটি পরী। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মাঝে মা কালীর প্রতিমার একপাশে থাকবে রাম,সীতা আর হনুমান। অন্যপাশে থাকবে শিব-পার্বতীকে ভগবান বিষ্ণুর বিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত। থিমে প্রতিমার এই চমক দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলেই আশাবাদী পূজা কমিটি।