অর্ণব আইচ: বিএসএফ (BSF) কর্তা পরিচয় দিয়েও ছক কষেছিল ভুয়ো আমলা দেবাঞ্জন দেব। তার বাড়ির ভিতর থেকে বিএসএফ কর্তার উর্দি বা ইউনিফর্ম উদ্ধার হয়েছে। সেই উর্দির উপর লেখা ‘দেবাঞ্জন’। বিষয়টি ঘিরে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। আইএএসের সঙ্গে বিএসএফ কর্তা সেজেও সে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ভুয়ো টিকাকরণের ক্যাম্প আয়োজনের ছক কষেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এই বিষয়টি জানার পর বিএসএফের গোয়েন্দারাও তদন্ত শুরু করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের মাদুরদহে দেবাঞ্জন দেবের (Debanjan Deb) বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়ই বিএসএফের একটি উর্দি উদ্ধার করে লালবাজারের ‘সিট’। ওই উর্দি এক বিএসএফ পদস্থ কর্তার। যদিও উর্দিতে দেবাঞ্জনের নিজের নামই লেখা। জানা গিয়েছে, গত পয়লা বৈশাখ দেবাঞ্জন তার কসবার ভুয়ো অফিসের কয়েকজন কর্মচারীকে মাদুরদহে নিজের বাড়িতে ডেকেছিল। সেখানে খাওয়াদাওয়ার মাঝেই সে ওই উর্দিটি তাঁদের দেখানো হয়। তাতে বিএসএফের রূপোলি ব্যাজও ছিল। এতে কর্মচারীর একটু হতবাকই হয়ে যান। কেউ কোনও প্রশ্ন করতে না পারলেও দেবাঞ্জন দাবি করে, বিএসএফের পক্ষ থেকে তাকে সাম্মানিকভাবে এক কর্তার পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই সে এই উর্দি আগামী কয়েক মাসের জন্য ব্যবহার করতে পারে। লালবাজারে কয়েকজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরে বাড়িতে তল্লাশি চলানোর সময় ওই উর্দিটি গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন।
[আরও পড়ুন: রেড রোডের দুর্ঘটনা: অবশেষে পুলিশের জালে পলাতক বাসচালক]
গোয়েন্দাদের ধারণা, কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) যুগ্ম কমিশনার পরিচয় দিয়ে সে কলকাতার দু’জায়গা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের এক জায়গায় করোনার ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এবার বিএসএফ কর্তা সেজে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতেও ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প করত সে। এমনকী, জেলার বাসিন্দাদের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া অথবা বিএসএফে চাকরি দেওয়ার নাম করে সে নতুন কোনও জালিয়াতির ছক কষছিল, এমন সম্ভাবনা রয়েই যায়। এই ক্ষেত্রে দেবাঞ্জনের নিরাপত্তারক্ষী অরবিন্দ বৈদ্য কোনওভাবে তাকে সাহায্য করেছিল কি না, তা জানতে অরবিন্দকে আলাদাভাবে গোয়েন্দারা জেরা করছেন। কারণ, অরবিন্দ গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছে, সে অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ জওয়ান। এই ব্যাপারে তার কাছ থেকে কিছু নথিও উদ্ধার হয়েছে। সেই নথিগুলি আসল কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করছে লালবাজারের ‘সিট’।
অরবিন্দ কোন কোন জায়গায় কর্মরত ছিল, গোয়েন্দারা তাও জানার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, নিরাপত্তারক্ষী অরবিন্দ বৈদ্য এই উর্দি জোগাড় করতে সাহায্য করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় সে দেবাঞ্জনকে উর্দি পরিয়ে ভুয়ো বিএসএফ কর্তা সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে জালিয়াতির ছক কষেছিল কি না, তাও অরবিন্দ ও দেবাঞ্জনের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। এদিকে, বিএসএফের এক কর্তা জানিয়েছেন, এভাবে বিএসএফের যে কোনও পদমর্যাদার কর্মী অথবা আধিকারিকের উর্দি কারও হাতে থাকা অথবা বাইরে বিক্রি হওয়া রীতিমতো অপরাধ। লালবাজারের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন বিএসএফের গোয়েন্দারা। এর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।