সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ভিখারি না। তারা সরকারের কাছে হাতও পাতেনি। যা করেছে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজেরাই করেছে”, মন্তব্য বলিউড পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়ার। ‘শিকারা’র প্রচারে এসে এমন সুরই শোনা যায় বিধুর গলায়। “শিকারা’ শুধু একটা সিনেমাই নয়, একটা আন্দোলনের নামও বটে! কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উৎসর্গ করেই এই ছবি” আবেগপ্লুত বিধু এমনটাই বললেন।
নয়ের দশকের ক্ষত আজও দগদগে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মনে। ভিটেমাটি উৎখাত, ছিন্নমূল কাশ্মীরের হিন্দু পরিবারদের সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায়। অথচ, এই গোটা সম্প্রদায়কে নিয়ে সরকার-প্রশাসন সবাই নির্বিকার। এমনই মত বিধু বিনোদের। পরিচালক নিজস্ব মত প্রকাশের ভাষা হিসেবে তাই সিনেমাকেই হাতিয়ার করে তুলেছেন। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সমস্যা, জীবনযাপন নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটা ছবি- ‘শিকারা’।
স্মৃতিরোমন্থন করে আবেগপ্রবণ কাশ্মীরি পণ্ডিত বিধু বলেন, “সমস্ত ঘরবাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আমাদের। নিজেদের ইচ্ছেশক্তিতেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি আমরা। এরকম গল্প বলার জন্য সাহসের প্রয়োজন। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দেখে কেউ করুণা করে আহা-ওহ করবে, ‘ওঁদের সঙ্গে কী খারাপটাই না হয়েছে’ বলবে… এরকম ছবি আমি বানাতে চাইনি। ‘শিকারা’র মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছি যে সমস্ত বাধা সত্ত্বেও কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা কীভাবে আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।” বিধু বিনোদ চোপড়া আসলে নিজেও কাশ্মীরি পণ্ডিত। তাই খুব কাছ থেকে এই গোটা সম্প্রদায়ের দুঃখ-কষ্ট, ঘুরে দাঁড়ানোর দিন দেখেছেন। সেই গল্পই তুলে ধরেছেন ‘শিকারা’য়।
[আরও পড়ুন: ‘বাচ্চাদের উপর গুলি চালাতে লজ্জা করে না’, বিজেপিকে ‘নির্লজ্জ’ তকমা বিশাল দাদলানির ]
নয়ের দশকে কাশ্মীর ভূ-খণ্ড থেকে কয়েক লক্ষ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তাড়িয়ে দেয় জঙ্গিরা। হিন্দুদের রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য লাগাতার হুমকি দেওয়া হয়। ধর্ষণ, গণহত্যার জেরে উপত্যকা থেকে দলে দলে পালিয়ে আসে হিন্দুরা। পরিসংখ্যান মতে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৬ লক্ষ হিন্দু ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজারে। কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’র পটভূমি, একদা সংস্কৃতের পীঠস্থান কাশ্মীর পরিণত হয় জেহাদিদের গড়ে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের উপর নাৎসি বাহিনীর অত্যাচার থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিপীড়ন কোনও অংশে কম নয়। আজও নিজের ভিটেতে ফিরে যেতে পারেননি তাঁরা। বিদেশি রোহিঙ্গাদের নিয়ে চোখের জল ফেললেও, ভারতীয় রাজনেতা তথা বুদ্ধিজীবীদের কাছে বরাবরই ব্রাত্য কাশ্মীরি পণ্ডিতরা।
এরকম এক প্রেক্ষাপটেই কাশ্মীরি যুগলের ভালবাসার গল্প বুনেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। তাঁদের প্রেমকাহিনির মধ্যে দিয়েই তুলে ধরেছেন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সমস্যা। ৩০ বছর পর কেমন আছেন সেসব বাস্তুহারা কাশ্মীরি পণ্ডিতরা? প্রশ্ন তুলেই ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘শিকারা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ কাশ্মীরি পণ্ডিতস’। অভিনয় করেছেন সাদিয়া এবং আদিল খান। চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক বিধু বিনোদ এবং অভিজাত যোশি। ছবির আবহসংগীতের দায়িত্ব এ আর রহমান।
[আরও পড়ুন: গ্রিলসের নতুন অতিথি, মোদি-রজনীর পর এবার জঙ্গল অভিযানে অক্ষয়! ]
The post ‘কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ভিখারি না, সরকারের কাছে হাতও পাতেনি’, ঝাঁজালো মন্তব্য বিধু বিনোদ চোপড়ার appeared first on Sangbad Pratidin.