বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: বিজেপির (BJP) কাছে বারবার হারছে কংগ্রেস। অভিযোগ করছিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। পাশে দাঁড়াল কেরল সিপিএম (CPM)। বিজেপি বিরোধিতায় ইউপিএ-র (UPA) পুনরাবৃত্তি নয়। কারণ কংগ্রেসের বিজেপি বিরোধিতা প্রশ্নের মুখে। আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। তাই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে অবিজেপি আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে জোট হোক। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে দাবি তুলল কেরল সিপিএমের হেভিওয়েট প্রতিনিধিরা। যদিও বাম, গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জোটের লাইনে চূড়ান্ত সিলমোহর দিলেন প্রতিনিধিরা।
কেরল লবির প্রবল বিরোধিতার মুখেও শেষ হাসি হাসলেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ২০১৮। হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেস। বদল হয় সিপিএমের রাজনৈতিক রণকৌশল লাইন। বিজেপি ও কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বের নীতি থেকে সরে আসে সিপিএম। ঘুরপথে কংগ্রেসকে জোটে আনতে নেওয়া হয় বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জোটের লাইন। তখনও কেরল লবির প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছিলন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বঙ্গ সিপিএমকে পাশে নিয়ে সুকৌশলে বদল আনেন রাজনৈতিক রণকৌশলের লাইনে। চারবছর পরেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। এই যুক্তিতে আগের লাইনেই স্থির থাকে সিপিএম। যদিও জানুয়ারি মাসে দিল্লিতে হয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে প্রথা ভেঙে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন পালটা দলিল পেশ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেয়নি।
[আরও পড়ুন: পড়ুয়া বোঝাই স্কুলবাস নিখোঁজ কাণ্ড: সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে নারাজ আতঙ্কিত অভিভাবকরা]
মালয়ালি মুখ্যমন্ত্রী যে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন তা সকলেরই জানা। পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে প্রথমদিন থেকেই তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন ইয়েচুরি ও বঙ্গ সিপিএমের (Bengal CPM) নেতারা। পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক রণকৌশল লাইনের উপর আলোচনার সময় প্রথমেই মাঠে নামান একসময় রাজ্যসভার সেরা সাংসদ ও কেরলের শিল্প আইনমন্ত্রী পি রাজীবকে। বিজয়নের হয়ে দুরন্ত ব্যাটিং করেন তিনি। কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্য রাখলে পার্টির কতখানি ক্ষতি তার পক্ষে একের পর এক যুক্তি খাড়া করেন। এর মধ্যেই বিজেপির বিরোধিতায় কংগ্রেসের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দুই শীর্ষনেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাট (Prakash Karat)। সুযোগ পেয়ে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেন কেরল বিধানসভার অধ্যক্ষ কে কে রাজেশ। পার্টির সাধারণ সম্পাদক যে রাজনৈতিক রণকৌশলের লাইন আলোচনার জন্য পেশ করেছেন তাতে বদল আনার দাবি করেন তিনি। তার দাবি ছিল, এমন রাজনৈতিক রণকৌশল লাইন নেওয়া হোক যেখানে কংগ্রেস ব্রাত্য থাকবে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই একই অভিযোগ করছে তৃণমূল।
বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোকে এক হওয়ার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাতে সাড়াও মিলছে। কেরল সিপিএমের হেভিওয়েট নেতাদের এমন দাবি কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগকে মান্যতা দেয় বলেই মনে করছেন পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। যদিও আলোচনা শেষে পার্টির আগের লাইন বহাল থাকছে। যেহেতু নির্বাচনের আগে কোনও জোট হবে না এবং রণকৌশল লাইনে কংগ্রেসের কথা উল্লেখ নেই, তাই সহজেই প্রতিনিধিদের সমর্থন পান সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechury)।
[আরও পড়ুন: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের ফাঁদ, বাংলাদেশকে বাগে আনতে নয়া ছক চিনের]
রাজনৈতিক রণকৌশল লাইনের উপর দু’দিনে ৪৮ জন আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট (Brinda Karat) জানান, এই মুহূর্তে পার্টি এবং দেশের প্রধান শত্রু বিজেপি। এই দল দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধানের সবচেয়ে বড় বিপদ। দেশের অখণ্ডতা বিপদের মুখে। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে। বিজেপিকে হারাতে সমস্ত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন—সহ সকলকে একজোট হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী জোট হলেও রাজ্যগুলির পরিস্থিতি অনুযায়ী যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতিতে পার্টি হাঁটবে বলে জানান তিনি।