সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ১৯০ বছর পর পঞ্চকোটরাজদের সূচনা করা রথযাত্রা অনুসরণ করে আবার রথের চাকা গড়াবে কেশরগড়ে। পুরুলিয়ার (Purulia) হুড়া ব্লকের কেশরগড় পঞ্চকোট রাজপরিবারের ষষ্ঠ রাজধানী ছিল। ১৭৯৩-১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ওই রাজত্বকালে এই রথের সূচনা হয়েছিল। পঞ্চকোটরাজ প্রবর্তিত কেশরগড়ের এই রথের সূচনা ঠিক কবে হয়েছিল তার দিনক্ষণ জানা না গেলেও রাজপরিবার সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ১৭৯৩ থেকে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৎকালীন পঞ্চকোট রাজা ভরতকিশোর ওরফে গরুড় নারায়ণ সিং দেও এই রথযাত্রা (Rath Yatra) চালু করেছিলেন। তারপর পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী কাশীপুরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে ওই রথের চাকা থেমে যায়। সেই রথযাত্রার অনুসরণেই শুক্রবার রথের রশিতে টান দেবেন বিস্তীর্ণ কেশরগড় গ্রামের মানুষজন।
তবে এ বছর রথের সূচনা হবে পঞ্চকোট রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যদের হাত ধরেই। তাই এই রথযাত্রার আয়োজনে থাকা কেশরগড় রথযাত্রা কমিটি পঞ্চকোট রাজ পরিবারের উত্তর পুরুষদের আমন্ত্রণ করেছেন। কেশরগড় রথযাত্রা কমিটির সভাপতি মধুসূদন সেন ও সম্পাদক জগবন্ধু চক্রবর্তী বলেন, “ইতিহাসকে ছুঁয়ে আবার নতুন ইতিহাসের সূচনার মাহেন্দ্রক্ষণ কখন আসবে তারই অপেক্ষায় যেন আমরা আবেগে ভাসছি।”
[আরও পড়ুন: রাজ্যে বড়সড় নাশকতার ছক? বীরভূমে উদ্ধার ৮১ হাজার ডিটোনেটর]
পঞ্চকোট রাজপরিবারের কেশরগড় ষষ্ঠ রাজধানী থাকার সময় মোট তিন রাজা রাজত্ব করেছিলেন। প্রথম রাজা ভরতকিশোর ১৮১৫ সালে মারা যাওয়ার পর তাঁর একমাত্র ছেলে তেজ সিং বা চেৎলাল রাজার আসনে বসেন। তবে তিনি প্রায় দু’বছর রাজত্ব সামলানোর পর ১৮১৭ সালে মারা যান। এরপর তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র রাজা জগজীবন রাম রাজত্ব সামলান ১৮৩২ সাল পর্যন্ত। তিনি ‘গরুড় নারায়ণ’ উপাধি পেয়েছিলেন। এই দীর্ঘ সময় মহাসমারোহে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছিল সেখানে। এবার সেই শতাব্দী প্রাচীন পঞ্চকোটরাজের রথযাত্রার পুনঃপ্রবর্তন হবে। সেইসঙ্গে আটদিন ব্যাপী উলটোরথ পর্যন্ত রথের মেলা হবে কেশরগড় হাটতলা প্রাঙ্গণে।
কেশরগড় কালাচাঁদ মন্দির থেকে রথ পরিক্রমা শুরু হবে। তারপর সমগ্র গ্রাম ঘুরবে। এই রথে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শন চক্র। পরিক্রমা শেষে জগন্নাথের মাসির বাড়িতে রথ থামবে। তারপর আবার উলটোরথে জগন্নাথ মহাপ্রভু, বলরাম, সুভদ্রাকে নিয়ে এই কেশরগড় কালাচাঁদ মন্দিরেই ফিরে আসবে। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি কাঠের। এই মূর্তি পঞ্চকোট রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যরা পুরী থেকে নিয়ে এসেছেন।
[আরও পড়ুন: চলন্ত অটোতে আগুন, ঝলসে মৃত্যু ৫ যাত্রীর, ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা সরকারের]
শুক্রবার বিধি মেনে সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। হবে পুজোপাঠ। তার আগে সকাল আটটা নাগাদ ১০৮ জন কুমারী মেয়ে কলস যাত্রা সহকারে রথ স্নান করবে। তারপর দুপুর দু’টো নাগাদ পঞ্চকোট রাজপরিবারের উত্তর পুরুষদের হাত ধরে বহু আকাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণে শুভ রথযাত্রার সূচনা হবে। এই উত্তর পুরুষরা বর্তমানে কাশীপুর, পুরুলিয়া শহর, পুঞ্চা ব্লকের রাজনোওয়াগড় পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের চাকলতোড়ে রয়েছেন। এই রথযাত্রার আয়োজনের উপদেষ্টা বঙ্কিম চক্রবর্তী বলেন, “আমরা পঞ্চকোট রাজপরিবারের ওই উত্তর পুরুষদের সকলকে আমন্ত্রণ করেছি। তাঁরাই রশিতে টান দিয়ে এই রথের পুনঃপ্রবর্তন করবেন।”
রথ সূচনার আগে যে পুজো পাঠ হবে সেই পুরোহিতের ভূমিকায় রয়েছেন কেশরগড়ের বাসিন্দা তরুণ মুখোপাধ্যায়, মঙ্গলময় বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেশরগড় গ্রামের বাসিন্দা উত্তম গড়াই নতুনভাবে জগন্নাথের ‘মাসিবাড়ি’ তৈরি করেছেন। উলটোরথের আগে পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।