কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় আয়ূষ মন্ত্রকের পরামর্শে আয়ূর্বেদ পানীয় ‘ক্কাথ’ এখন ঘরে ঘরে খুবই জনপ্রিয়। বাজারে-দোকানে গিয়ে তুলসীপাতা, আদা, গোলমরিচ, দারুচিনির মতো নানা গাছ ও গাছের অংশ কিনছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু কোনও ঔষধি গাছ, মানে ‘আয়ুর্বেদিক হার্ব’ কতটা পরিমাণে মেশাতে হবে তা অনেকেরই অজানা। অনেক সময় বাজারে ভুল গাছের শিকড় চাপিয়ে দেওয়া হয়। স্বভাবতই কোভিড প্রতিরোধের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পানীয় খাচ্ছেন তা কাজে লাগছে না। এমনই প্রেক্ষাপটে করোনা প্রতিরোধে মোক্ষম অস্ত্র দিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাঙালি অ্যারোমা বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ।
অস্ত্রটি হল, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা ১৮ টি ‘আয়ুর্বেদিক হার্ব’ দিয়ে তৈরি পানীয়ের উপাদান, ‘ড্রাই ক্কাথ’।প্রাচীন মুনি-ঋষিদের রচনায় সমৃদ্ধ আয়ুর্বেদ পুস্তিকা থেকে দুর্লভ সমস্ত তথ্য যোগাড় করেছেন তিনি। আয়ূষ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে লকডাউনের সময়ে নিজের গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়ে তৈরি করলেন ইমিউনিটি বৃদ্ধির ব্রহ্মাস্ত্র। পৌরানিক আবহে দেবনাগরী অক্ষরের স্টাইলে নাম লিখছেন ‘শক্তি’।
মিশ্রণটি দেখতে পাতা চায়ের মতই। কেয়ার কথায়, “করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করবে বলছি না, কিন্তু ‘শক্তি’ নিয়মিত সেবন করলে শরীরের ইমিউনিটি বাড়িয়ে কোভিডের মতো অনেক ভাইরাস দেহে ঢুকতে দেবে না।” চা যেমন তৈরি করেন ঠিক তেমনই গরম জলে এক চা চামচ ‘ড্রাই ক্কাথ’ ২০০ মিলি জলে দিয়ে ছেঁকে নিলেই কেল্লা ফতে। নিজের পরিবারে, অফিসের সহকর্মীদের উপরই প্রথম এই ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ প্রয়োগ করে ব্যপক সাফল্যও পেয়েছেন বলে দাবি। সর্দি-কাশিতেও চটজলদি উপশম হয়।
[আরও পড়ুন: মুখের স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারালেই এবার কোভিড টেস্ট, নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রের]
কী কী আছে বোতল বন্দি হয়ে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা আয়ুর্বেদ পানীয়ে? “ষষ্ঠীমধু, আদা, তেজপাতা, আমলা, তুলসী, হরিদ্রা, দারুচিনি, গোলমরিচ, ছোট এলাচ, কালো জিরা, লবঙ্গ, পিপুলমুল, শতমুলী, গুলঞ্চ, বাসক, জটামাংসী, অশ্বগন্ধা আছে নানা মাত্রায়। প্রত্যেকটি পৃথক তাপমাত্রায় তৈরি করে মিশ্রন। কারণ, সেরা গুণমানের জন্য নিজস্ব তাপমাত্রা রয়েছে প্রতিটি গাছের।” ঔষধি গাছগুলির কোনওটি ফুসফুস, কোনওটি শ্বাসনালি, কোনটি লিভার সুস্থ রাখে। হিমালয় থেকে জঙ্গলমহল, বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছে নানা গাছ। যেমন, হিমাচল থেকে ১০০ কেজি যষ্ঠীমধুর ডালপালা এনেছেন”, শোনালেন কেয়া।
করোনা আবহে তা হলে কী প্রসাধন ও সৌন্দর্য ব্যবসায় বদল এল? বললেন,“ বিউটি প্রোডাক্টের চাহিদা একটুও কমেনি। লকডাউনেও জোগান দিয়েছি। হ্যাঁ, করোনা প্রতিরোধ কেন্দ্রিক নতুন ডিভিশন খুলেছি।” আগেই জীবাণু দূর করার জন্য আয়ুবের্দিক অ্যান্টিসেপ্টিক প্রোডাক্ত ছিল। লকডাউন হতেই রাজ্য সরকার স্যানিটাইজার তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে দ্রুত সাপ্লাইয়ের জন্য বরাত দেয় কেয়াকে। তার পর স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ থেকে শুরু এখন তো জীবাণুমুক্ত করার টানেলও তৈরি করছে কেয়া শেঠের কোম্পানি। জামাকাপড় পরা ব্যক্তিকে জীবাণুনাশ করতে কেয়া শেঠের স্প্রে খুব কার্যকর। তবে তাঁর দাবি, “সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে পার্লার-স্পা, প্রসাধন ও ফ্যাশন মল করেছি। এখন করোনা প্রতিরোধী মানুষের জন্য।” আসলে মানুষের মন, চাহিদা বুঝে যে তিনি চলেন তা ফের বোঝালেন।
ছবি- পিন্টু প্রধান
[আরও পড়ুন: করোনায় স্বস্তি দেবে ‘প্রন পজিশন’, চিকিৎসায় সিলমোহর কেন্দ্রের]
The post করোনা প্রতিরোধে এবার ‘ড্রাই ক্কাথ’ আনলেন কেয়া শেঠ, যা ইমিউনিটি বৃদ্ধির ব্রহ্মাস্ত্র appeared first on Sangbad Pratidin.