shono
Advertisement

উন্নয়নের স্পর্শে আলোকবৃত্তে জঙ্গলকন্যারা, ‘খেলো ইন্ডিয়া’চ্যাম্পিয়ান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতসেরা তরুণীদের অধিকাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
Posted: 12:20 PM May 07, 2022Updated: 12:36 PM May 07, 2022

সম‌্যক খান, মেদিনীপুর: অখ্যাত গাঁয়ের এঁদো গলি থেকে একেবারে রাজপথে। জঙ্গলমহল কাপ বদলে দিয়েছে ওঁদের জীবন। ওঁরা, মানে মুগলী হেমব্রম, পূর্ণিমা মাণ্ডি, প্রতিমা মাহাতো, সিঙ্গো মুর্মু, তুলসী হেমব্রম, রিঙ্কি ওরাওঁরা। বছর কুড়ির আশপাশের ওই একদল তরুণী প্রায় সকলেই জঙ্গলমহলের বাসিন্দা। গুটিগুটি পায়ের সংকোচ ছেড়ে আজ তাঁদের দৃপ্ত পদক্ষেপে গর্বিত পাড়া-পড়শি সহ তামাম বাংলা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের সদস্য হয়ে আজ যে তাঁরা ভারতসেরার শিরোপাধারী! জঙ্গলমহলের ওই কন্যাদের দৌলতেই দেশব্যাপী খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমসের ফুটবল প্রতিযোগিতায় চাম্পিয়ন হতে পেরেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ওঁদের সামনে এখন ঘনঘন ক্যামেরার ঝলকানি, বাইট নিতে মিডিয়ার হুড়োহুড়ি।

Advertisement

রাজ্যে পালাবদলের সময় জঙ্গলমহল ছিল চূড়ান্ত অশান্ত। চারদিকে কিষানজি বাহিনী তথা মাওবাদীদের উপদ্রব। প্রায় প্রতিদিন মৃতদেহ শনাক্তকরণের পালা, কার কোন পরিজন খুন হলেন! পালাবদলের পরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। পুলিশি এনকাউন্টারে কিষানজির মৃত্যুর পরে একেবারে শান্ত হয়ে যায় জঙ্গলমহল। পাশাপাশি এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে নানা পরিকল্পনা নেয় মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।

[আরও পড়ুন: হোটেলের ছাদ থেকে পড়ে প্রাণহানি? দিঘায় পর্যটকের রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য]

আর তারই অঙ্গ হিসাবে পুলিশের উদ্যোগে জঙ্গলমহল কাপের সূচনা। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানার গড়ে দেওয়া টিম নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা। ফি-বছর অনুষ্ঠিত জঙ্গলমহল কাপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স টিমের সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার।যে কারণে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া টুর্নামেন্টে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ফুটবল টিমের ২০ সদস্যের ১৬ জনই বর্তমানে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে নিযুক্ত। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো পরিবার থেকে উঠে আসা ওই জঙ্গলকন্যারা যে শুধু্ নিজেদের খরচে পড়াশোনা চালাচ্ছেন তা-ই নয়, সংসারকে অর্থসাহায্যও করে চলেছেন।

যেমন দলের অধিনায়ক মুগলী হেমব্রম। বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। মা-বাবা, দাদা-বউদি ও ভাই-বোনের বড় সংসারের অভিভাবক যিনি, সেই বাবা প্রায় অক্ষম। দাদার আয়ও নামমাত্র। নয়াগ্রামের মুগলী এক বছর আগে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু গভর্নমেন্ট কলেজে পাস কোর্সে তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমেস্টারের ছাত্রীটি বান্ধবীদের সঙ্গে কলেজের কাছে একটি মেসে থাকেন। ডিউটি দিতে হয় নয়াগ্রাম থানায়, বেতন মাসে ন’হাজার টাকা। সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রতি মাসে বাবার হাতে তুলে দেন।
পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব সুচারুভাবে সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে গোটা ফুটবল টিমকে একসূত্রে গেঁথে রাখার বিপুল দক্ষতা মুগলীর। টিমের সতীর্থ নির্মলা মাণ্ডি ও কাকলি হাঁসদার সঙ্গে প্রতিদিন থানায় সকাল ৭টা থেকে ১টা পর্যন্ত ডিউটি, তারপর মেসে খাওয়াদাওয়া ও একটু বিশ্রাম। বিকেলে স্থানীয় খড়িকামাথানি নেতাজি পাঠাগার ক্লাবের মাঠে ফুটবল অনুশীলন। সেখানে সঙ্গী নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠের অন্যান্য ছাত্রী তথা খেলোয়াড়রাও। আবার লাগোয়া থানা সাঁকরাইলের মাঠেও প্র‌্যাকটিস চলে, কারণ সেখানেই টিমের সবথেকে বেশি সদস্য থাকেন।

[আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রী ও স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক, রাজ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বদলাবে সিলেবাস]

বস্তুত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ফুটবল টিমের ২০ জনের মধ্যে ১৩ জনই সাঁকরাইলের। তাদের সিংহভাগ স্থানীয় অনিল বিশ্বাস স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। পঠনপাঠন, ডিউটির পাশাপাশি মাঠে নিয়মিত হাজিরায় গাফিলতি নেই কারও। হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও টিমের এই সাফল্যে যারপরনাই খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিবাজীপ্রতিম বসু, রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী থেকে শুরু করে ক্রীড়া আধিকারিক সুহাস বারিক। আগামী ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে টিমকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। সাফল্য ও সংবর্ধনায় মুগলীরা আপ্লুত। ওঁদের আশা, সরকার এ ভাবেই বরাবর পাশে থাকবে, আরও ভাল চাকরির ব্যবস্থা হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার