সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেত্রী হিনা খান (Hina Khan)। মারণ রোগের তৃতীয় ধাপ। লড়াই কঠিন। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ অভিনেত্রী। এই যুদ্ধ শুধু তাঁকে নয় বহু নারীকে করতে হয়েছে। এবং করতে হচ্ছে। ‘ক্যানসার’ শব্দের সঙ্গে যেন মৃত্যু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করলে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ব্রেস্ট বা স্তন ক্যানসারও এর ব্যতিক্রম নয়।
কীভাবে শরীরে ক্যানসারের মতো রোগের জন্ম হয়?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই রোগ আমাদের শরীরে থাকা বিআরসিএ বা ব্র্যাকা নামক জিনের ত্রুটি থেকেই শুরু হয়। আমাদের শরীরে মূলত বিআরসিএ বা ব্র্যাকা নামের দুটি জিন থাকে, তার মধ্যে যে কোনও একটি জিনে কোনওরকম ত্রুটি তৈরি হলে সেটা সরাসরি আমাদের শরীরে থাকা ডিএনএ গুলির উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। যার ফলে সেখান থেকেই জন্ম নেয় ক্যানসারের জীবাণু। আর সেই জীবাণু যখন ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই কেউ ক্যানসার দ্বারা আক্রান্ত হয়।
ছবি: সংগৃহীত
কখন সতর্ক হবেন?
প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় হলে ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব। মনে রাখবেন, যত বয়স বাড়ে তত ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ব্যথাহীন ‘ব্রেস্ট লাম্প’(স্তন ফোলা বা মাংসপিণ্ড হওয়া) দেখতে পেলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। স্তনবৃন্ত দিয়ে রক্তক্ষরণ, হঠাৎ আকৃতি বদলে যাওয়া, স্তনবৃন্ত ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, বগলে ফোলা ইত্যাদি স্তন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। 'ব্রেস্ট লাম্প' মানেই কিন্তু ক্যানসার নয়, তবে তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
[আরও পড়ুন: যৌনদৃশ্যে চরম অস্বস্তি! ‘মহারাজ’-এর সেট ছেড়ে বেরিয়ে যান আমিরপুত্রর নায়িকা]
কী করবেন?
প্রতিদিন পোশাক পরার সময় নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করুন। আর তাতে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা বা ব্যথা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরার্মশ নিন। যদিও অনেক ডাক্তারাই মনে করেন বেশিরভাগ অল্পবয়সি মেয়েরাই তাঁদের স্তনে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা বা ব্যথা দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যান না। কারণ তাঁরা মনে করেন এতে হয়তো তাঁদের স্তন কেটে ফেলার মতো ঝুঁকি নিতে হতে পারে। সবক্ষেত্রে এমনটা হয় না। হ্যাঁ, ব্রেস্ট ক্যানসারের মূল চিকিৎসা হল সার্জারি বা অপারেশন। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে তা প্রায় ৯০ শতাংশ নিরাময়যোগ্য। 'BCT' পদ্ধতির মাধ্যমে স্তন বাঁচিয়েও অপারেশন সম্ভব।
কী এই পদ্ধতি?
ব্রেস্ট ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে (Stage I, II এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে Stage III) থাকে তাহলে ব্রেস্ট বা স্তন বাঁচিয়েও অপারেশন সম্ভব। এক্ষেত্রে ‘অঙ্কোপ্লাস্টি’ পদ্ধতিতে ক্যানসার বাদ দেওয়া হয় এবং স্তনের সৌন্দর্যও রক্ষা হয়। এর পর রেডিও থেরাপির মাধ্যমে ভবিষ্যতে রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে, সাধারণত সার্জারির এক-দু’দিন পরেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছবি: সংগৃহীত
কখন কেমোথেরাপি প্রয়োজন?
যদি রোগ নির্ণয়ে দেরি হয় তাহলে কেমোথেরাপির প্রয়োজন। Advance বা Locally Advanced Stage-এ প্রথমেই কেমোথেরাপি দিয়ে ক্যানসারকে ছোট করে তারপর অপারেশন করা হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে সার্জারির পর বায়োপসি অনুযায়ী কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গেই বলা যায় প্রখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা। তিনি নিজে পরীক্ষা করে যখন দেখেছিলেন তাঁর ব্রেস্ট ক্যানসারে হওয়ার ৮৭% সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তিনি নিজেই নিজের স্তন কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কশ্যপও অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। লড়াই করে জীবনের পথে ফিরেছেন মহিমা চৌধুরী। তাই শক্ত থাকতে হবে। আর লড়াই করে যেতে হবে।