নির্মল ধর: ইচ্ছেমতো দলের নাটক ‘কিত্তনখোলা’ (Kittonkhola)। যাতে নদীর পাড়ে বসা বাৎসরিক মেলার সাথে যোগ দেয় মাঝবয়সী ইদুর যাত্রাপালার দলও। সেই দলের নটনটীদের ফস্টিনস্টি, ঈর্ষা, প্রেম-পিরিতি, মেলার এক কর্তার নেক নজর ইত্যাদি ঘটনা-উপঘটনা নিয়ে সাজানো একটা গল্প। আর তাতে এখানকার জল-মাটির স্বাদ-গন্ধ দিয়ে এপার বাঙলার প্রলেপ দিয়েছেন সৌরভ পালোধি।
দুই বাংলার সাধারণ মানুষের রোজকার যাপিত জীবন এবং লড়াইয়ে তেমন পার্থক্যও নেই। ফলে ওপারের ‘কিত্তনখোলা’ খুব সহজেই এপারের মাটি জল হাওয়ায় মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে সৌরভের স্বাভাবিক, সহজ ও সরল নির্দেশনার কারুকাজে। এই নাটকের শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হোল মাটির গন্ধ মেশানো গান। যাত্রা দলের গানের সঙ্গে মিশেছে জীবন সম্পৃক্ত গানও। সঙ্গীত পরিচালক দেবদীপ মুখোপাধ্যায় গানের কথায় সহজিয়া ভাষায় জীবনের সাবলীল ও গভীর সত্যকে ছুঁতে পেরেছেন।
[আরও পড়ুন: অগ্রিম বুকিংয়েই ঝড় তুলল ‘টাইগার ৩’, মুক্তির আগেই কোটি টাকার ব্যবসা সলমনের ছবির]
“হাতে পেলে মনের চাবি / জানি জানি তুই পালাবি” বা “মায়ের ভোটের আধারটি দিয়োগো আমায়” গানগুলোয় জীবনের চিরন্তন সত্য গুলো উন্মোচিত হয়ে পড়ে। দেবদীপের সুরেও রয়েছে স্থানীয় ভূমির আবেশ। এই নাটকের উপস্থাপনায় নির্দেশক ও সঙ্গীতকারের সঙ্গে সমান সুরে তালে ও লয়ে অভিনয় করছেন চরিত্র শিল্পীরা। প্রথমেই মনে আসছে ইদুর চরিত্রে শংকর দেবনাথকে। যদিও তিনি দলে সম্ভবত ‘অতিথি’ শিল্পী, কিন্তু তাঁকে সরিয়ে রাখা অসম্ভব।
শংকর চরিত্রটির লোভ-লালসা, কুটিলতার পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা এক সংবেদনশীল মানুষও রয়েছে। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে অনুজয় চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু সাহা, শ্রেষ্ঠা নস্কর, সুচরিতা মান্না, শুভাশিস খামারু, আহেলি সরকার, শান্তনু মণ্ডল, প্রত্যেকেই প্রায় একই লয়ে অভিনয় ধরে রেখেছিলেন। সবমিলিয়ে ‘ইচ্ছেমতো’ দলের এই উপস্থাপনা কোনোভাবেই নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের প্রযোজনার চাইতে পিছিয়ে থাকে না।