ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম নিয়ে ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষ লেখায় পিএফআরডিএ চেয়ারম্যান, সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথমেই মনে করিয়ে দিই যে কেন্দ্রীয় সরকার NPS বা ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম নতুন সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবশ্যিক করেছিল সেই ১ জানুয়ারি ২০০৪-এই। পরে রাজ্য সরকারগুলি নিজেদের কর্মীদের জন্যও তা গ্রহণ করেছে। আপনারা তো জানেনই NPS-এর ভিত্তি একটি ‘ইউনিক ইন্ডিভিজুয়াল পেনশন অ্যাকাউন্ট’, যেটিকে আমাদের পরিভাষায় ‘পার্মানেন্ট রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর’ (PRAN) বলা হয়। এর মাধ্যমে একক গ্রাহক ধারাবাহিকভাবে সঞ্চয় করতে পারেন যখন তিনি কর্মরত অবস্থায় রয়েছেন। পরে জমা হওয়া সম্পদের ভিত্তিতে, নিজের অবসরের পরে, আজীবন পেনশন পাওয়া তাহলে সম্ভবপর হবে।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে NPS-এর অন্তর্গত একটি ‘অল সিটিজেন’ মডেলও আছে। যে কোনও ব্যক্তি স্বপ্রবৃত্ত হয়ে এর মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারেন। অন্যান্য মডেলের সঙ্গে (অর্থাৎ আন-অর্গানাইজড সেক্টর মডেল, কর্পোরেট মডেল এবং এনআরআই/ওসিআই মডেল) এটির কথা সুবিদিত। এছাড়াও আছে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রান্তিক মানুষরা, যাঁদের লগ্নির ক্ষমতা সীমিত। ‘অটল পেনশন যোজনা’, যেটি আমরাই পরিচালনা করে থাকি, নানা ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রিজিওনাল রুরাল ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়।
[আরও পড়ুন: বিমার জগতে ‘পারফেক্ট ম্যাচ’ হতে পারে ইউলিপ, লগ্নির আগে জেনে নিন খুঁটিনটি]
আজ আপনাদের কাছে কিছু বিশেষ প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি। আমরা মনে করি যে এই প্রচেষ্টাগুলির প্রতিটিই গ্রাহকদের স্বার্থে নেওয়া। যেগুলি নিয়ে কথা বলতে চাই, সেগুলি হল–
১) এন্ট্রি এজের বদল
২) অ্যাসেট অ্যালোকেশন নিয়মের পরিবর্তন
৩) নতুন একজিট সংক্রান্ত নীতি
একে একে জানাই বিশদে-
–আগে এন্ট্রি এজ ছিল ৬৫ বছর। আর এখন সেটি বাড়িয়ে ৭০ বছর করেছি আমরা। এই মুহূর্তে যিনি ১৮ আর ৭০ বছরের মধ্যে, তিনিই NPS-এ যোগ দিতে পারবেন। নতুন নিয়মে প্রাক্তন গ্রাহকরাও তাঁদের অ্যাকাউন্ট রিওপেন করতে পারবেন।
–কেউ যদি ৬৫ বছরের পর যোগ দেন, তিনি নিজের পেনশন ফান্ড ও অ্যাসেট অ্যালোকেশনের পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন প্রয়োজন অনুযায়ী। ‘অটো চয়েস’ যদি বেছে নেন, তাহলে ইকুইটি এক্সপোজার সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হতে পারে। আর ‘অ্যাক্টিভ চয়েস’ যদি পছন্দ হয়, তাহলে সেটি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হওয়া সম্ভব।
–কোনও নতুন গ্রাহক যদি ৬০ বছরের পর যোগ দেন, তাহলে তিন বছর লক-ইন পিরিয়ড প্রযোজ্য হয়। একজিটের সর্বাধিক বয়স ৭৫ বছর। গ্রাহক তাঁর কর্পাসের ৬০ শতাংশ উইথড্র করতে পারেন-এটি ট্যাক্স-ফ্রি এককালীন হিসাবে গণ্য হবে। ‘লাম্পসাম’ যাকে বলা হয়ে থাকে। বাকি ৪০ শতাংশ দিয়ে একটি অ্যানুইটি কিনতে হবে। যদি কর্পাস পাঁচ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে গ্রাহক পুরো টাকাই তুলে নিতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে জেনে নিতে হবে যে, ষাট বছরের আগে যদি কেউ NPS থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে কেবল জমে থাকা সম্পদের ২০ শতাংশ পাবেন লাম্পসাম হিসাবে। বাকি অংশ দিয়ে অ্যানুইটি কিনতে হবে। এই তথাকথিত ৮০ : ২০ নিয়ম সব গ্রাহকদের জন্যই বলবৎ-মানে সরকারি কর্মীই হোক বা বেসরকারি, সকলেই এই নীতির অন্তর্গত। অবশ্য বয়স ১৮ এবং ৬০-এর মধ্যে হতে হবে। তবে বেসরকারি কর্মীর জন্য অন্তত পাঁচ বছর NPS-এ থাকা নিয়মের মধ্যেই পড়ে। ‘প্রিম্যাচিওর একজিট’-এর সংজ্ঞা ভাল করে জেনে নেওয়া উচিত-এ ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
এছাড়াও POP (পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স) সম্পর্কে জেনে রাখুন। আজ এনপিএস অ্যাকাউন্ট নানা শ্রেণির ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে খোলা যায়। ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC) বা পোস্ট অফিস এর মধ্যে পড়ে। POP-রা বিভিন্ন দরকারি পরিষেবা দিতে সক্ষম। রেজিস্ট্রেশন, অ্যাকাউন্ট মেন্টেন্যান্স, স্টেটমেন্ট ইস্যু ইত্যাদি। আমরা সম্প্রতি POP পরিষেবার ক্ষেত্রে চার্জের হার পরিবর্তন করছি। নতুন চার্জ অল সিটিজেন এবং কর্পোরেট মডেলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চার্জের কথাই যখন উঠল, তাহলে জানিয়ে রাখি যে, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ‘eNPS’-র মাধ্যমে করা পরবর্তী কন্ট্রিবিউশনের চার্জ ০.২০ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে (যাঁরা POP দের সাহায্য নেবেন)। ন্যূনতম ১৫ চাকা এবং সর্বাধিক ১০,০০০ টাকা। আমাদের চার্জ সংক্রান্ত নীতি খুব স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।