পরিকল্পনা তো প্রত্যেকেই করেন। কেরিয়ার নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু দিনের শেষে ক’জনে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন-যা ভেবেছিলেন, যেমনটা ভেবেছিলেন, ঠিক তেমনটাই হয়েছে? সংখ্যাটা নেহাত বেশি নয়। ফাইন্যান্স ক্ষেত্রটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই জগতে সঠিকভাবে প্ল্যানিং করতে গেলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা বিনিয়োগকারী, তাঁদের জন্য। এই লেখায় বিনিয়োগকারীদের সেই সোনার খনির সন্ধান দিলেন শৈবাল বিশ্বাস
ভবিষ্যতের কথা ভেবে যদি বিনিয়োগের দুনিয়ায় পা রাখতে চান, তাহলে যথাযথ ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যান চাই-ই। নিজের প্ল্যান কীভাবে করবেন, এবং প্ল্যানের মধ্যে কী ধরনের ইনস্ট্রুমেন্টস রাখবেন, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন এবং আমাকে প্রশ্ন করেন। আজ ‘সঞ্চয়’-এর জন্য আমার প্রথম লেখায়, আমি সোজাসুজি চার ধরনের প্রোডাক্টের কথা বলছি। আমার মতে এগুলি না হলেই নয়। এছাড়াও যে জরুরি পয়েন্টটি উল্লেখ করতে চাই, তা থাকছে এই লেখার একেবারে শেষে।
প্রথমেই বলি ইনসিওরেন্সের কথা-নির্দিষ্টভাবে বললে টার্ম প্ল্যান। অনিশ্চিত এই জীবনে তো আগামিদিনে কত কিছুই ঘটতে পারে। অতএব লাইফ কভারেজ অতীব প্রয়োজনীয়। পরিবারের ‘আর্নিং মেম্বার’ তথা রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু হলে ‘ডিপেন্ডেন্ট’ যাঁরা আছেন, তাঁরা কী করবেন? ভাল টার্ম প্ল্যান সেজন্য অবশ্যই দরকার। নানাভাবে প্ল্যানের আদর্শ সাইজে পৌঁছতে পারেন, একাধিক মাপকাঠি ব্যবহার করতেও অসুবিধা নেই। তবে সরলভাবে বোঝানোর জন্য বলি, ন্যূনতম ৫০ লক্ষ টাকার প্ল্যান নেওয়ার চেষ্টা করুন, নিজের ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: নিশ্চিন্তে অবসর যাপন, বাছবেন কোন পেনশন প্ল্যান?]
দ্বিতীয়ত, মেডিক্লেমের কথা ভুলবেন না। বেস কভার ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকার হোক-এমন পরামর্শই দেব আমি। তার উপর একটি ভাল টপ-আপও নিতে হবে কিন্তু। মনে রাখুন, চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ বেশ বাড়ছে, তাই একটু উঁচু স্তরের লিমিট যদি নেন, তাতে কোনও ক্ষতি দেখি না। বেস পলিসি এবং টপ-আপ আদতে সস্তাই পড়বে গ্রাহকের জন্য।
তৃতীয়ত, ইকুইটি ফান্ডের কথা অবশ্যই ভাবুন -ইনফ্লেশনের জমানায় তা আপনার পক্ষে তা নিশ্চয়ই ভাল হবে, আমি দৃঢ়ভাবে একথা বিশ্বাস করি। যে প্রোডাক্টের মাধ্যমে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে, আপনি মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে পারবেন, তা অবশ্যই ইকুইটি ফান্ড।
এই প্রসঙ্গে দুটি বিশেষ কথা :
l যদি আপনি মার্কেটে নতুন হন, বা তুলনায় মাঝ-বয়সী, তাহলে লার্জ ক্যাপ এবং/অথবা ইনডেক্স ফান্ড বেছে নিন।
l যদি অপেক্ষাকৃত তরুণ হন, তাহলে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ বাছুন। নাহলে ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ড নির্বাচন করুন।
এখানে বলে রাখি, যে প্রতিটি মানুষের রিস্ক প্রোফাইল আলাদা। তাই সঠিক ফান্ড বেছে নেওয়া আপনার পক্ষে কঠিন হতে পারে। তবে তা বলে হতাশ হবেন না। তাহলে নৈরাশ্যে ছায়া আপনার পোর্টফোলিওর উপর পড়তে বাধ্য। এবার মনে করুন, আপনার রোজগার স্থায়ী নয়, যাকে বলে ‘পিরিওডিক’। জেনে রাখুন, সেক্ষেত্রে আপনার পদ্ধতি হবে ‘স্ট্যাগার্ড’- অর্থাৎ, বিনিয়োগ করবেন ভেঙে ভেঙে। ‘সিপ’ (SIP) করুন। সুফল পাবেন, এমন আশা রাখুন।
চতুর্থত, ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)। অবসরের জন্য তৈরি থাকতে চান? তাহলে এনপিএস শুরু করুন একেবারে পরিকল্পিত ভাবে। যথাসম্ভব আগে চালু করে দেখুন, ‘লেটকামার’-এর থেকে ভাল ফল লাভ করবেন। অবসরকালে অ্যানুইটি নিন। যাঁরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে পেনশন পান না, তাঁদের জন্যই বিশেষভাবে বলছি আমি। অন্যান্য সাধারণ পেনশন প্ল্যান, যেগুলি বিমা সংস্থা দিয়ে থাকে, সেগুলির তুলনায় এনপিএস বেশ উন্নত। ট্যাক্স সেভিং নিয়ে জেনে রাখুন এই প্রসঙ্গে।
এবার আসি একেবারে শেষ পর্বে। ‘এর্মাজেন্সি কর্পাস’ নিয়ে আলাদাভাবে বলতে চাই। জানেনই তো, বিপদ হুট করেই আসে, আগাম জানিয়ে নয়। তাই অন্তত ছয় মাসের টাকা (খরচের উপর ভিত্তি করে) সরিয়ে রাখুন। এখন, প্রশ্ন হল কীভাবে রাখবেন। স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে, এমনভাবে জমা করুন যাতে অতি সহজে এবং অতি দ্রুত, সেটি ‘লিকুইডেট’ করা সম্ভব হয়। তার মানে একেবারে হাতের কাছেই থাকুক। হয় ‘লিকুইড’ ফান্ড বা ‘আল্ট্রা শর্ট টার্ম’ ফান্ডে রাখুন, নয় ‘অটো-রিনিউএবল’ ফিক্সড ডিপোজিট করে জমান। ‘এমার্জেন্সি’র জন্য জমাচ্ছেন, তাই বিপদ-আপদ মোকাবিলা করার জন্যই খরচ করুন, অন্য কারণে নয়। এই পাঁচটি নিয়ম মেনে চলুন, সুষ্ঠুভাবে পোর্টফোলিও তৈরি করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।