বাবুল হক, মালদহ: চতুর্ভুজা নন, মহাকালী এখানে দশভুজা, দশাননাও। অমাবস্যায় নয়, ১০ মস্তক, ১০ হাত বিশিষ্ট মহাকালী পূজিত হন চতুর্দশীতে। কালীপুজোর (Kali Puja) পর দেবীর মূর্তি নিয়ে শহরের রাজপথে বেরয় শোভাযাত্রা। তবে এবার করোনা আবহে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ছেদ পড়ছে, জানাল মালদহ (Maldah) শহরের ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতি।
এখানে দেবীর দশ মাথা, দশ হাত ও দশ পা। প্রতিমায় শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দশ হাতেই অস্ত্র। দেবীর পায়ের তলায় অসুরের কাটা মুণ্ড। প্রতি হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। জনশ্রুতি, ‘চণ্ডী’ গ্রন্থে এই মূর্তির উল্লেখ আছে। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়েও প্রাচীন যুগের খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি। ভূত চতুর্দশীর দুপুরে এমনই দশমাথা বিশিষ্ট মহাকালীর সাধনায় মাতবেন মালদহবাসী। রীতি মেনেই মহাধুমধাম করে শহরে এই মহাকালীর শোভাযাত্রা হয়ে থাকে। তারপর মালদহ শহরের গঙ্গাবাগে শুরু হয় মায়ের আরাধনা। বিকেল নাগাদ শুরু হয় পাঠাবলি। সন্ধ্যায় প্রসাদ বিতরণ।
[আরও পড়ুন: ডাকাতদের ছাগবলির রক্তেই আজও সন্তুষ্ট হন মা, জানুন সেনবাড়ির কালীপুজোর ইতিহাস]
ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জেলার বিপ্লবীরা এই মহাকালীর পুজো শুরু করেছিলেন। অনেকের কাছেই এই পুজো ‘বিপ্লবীদের পুজো’ হিসাবে পরিচিত। ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতি ১৯৩০ সালে তৈরি হয়েছিল। সমিতির এক কর্তা জানান, দেশে তখন ইংরেজদের রাজত্ব চলছিল। বিদেশি শাসকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শহরের পুড়াটুলির কয়েকজন যুবক ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন। মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেদের সুদৃঢ় করে তুলতে যুবকরা একটি ব্যায়ামাগার নির্মাণ করেন। অনুশীলন শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় শক্তির আরাধনা। তখন তাঁদের আরাধ্যা ছিলেন দশ মাথার মহাকালী। পরে পুড়াটুলি থেকে পুজোর স্থান পরিবর্তিত হয়ে চলে আসে শহরের গঙ্গাবাগে। ১৯৮৫ সালে গঙ্গাবাগ এলাকায় মন্দির নির্মিত হয় এবং পুজো হয় এখানেই। ইতিহাস বলতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
[আরও পড়ুন: কালীপুজোর রাতে কুয়ো থেকে মুক্তি পায় প্রেতের দল! জানুন আসানসোলের এই মন্দিরের কাহিনি]
সালের হিসেব বলছে, ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতির এই পুজো এবার ৯০তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। অতীত ঐতিহ্য অটুট রয়েছে আজও। কিন্তু চলতি বছর ব্যতিক্রমী মহামারী পরিস্থিতি। জাঁকজমকপূর্ণ মহাকালীর শোভাযাত্রা হবে না। প্রতিমা আনয়নের সময় এবার থাকছে না হরেক রকম বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের দল। শহরবাসী দেখতে পাবেন না কলকাতার ধুপচি নাচ, শিবপুরের ভাঙড়া কিংবা চন্দননগরের ক্লাব ব্যান্ড।