অভিরূপ দাস: পরপর দু’বার কোভিড-১৯ (COVID-19) আঘাত হেনেছিল তাঁর ফুসফুসে। দীর্ঘদিন ভুগে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। নিয়েছিলেন টিকার প্রথম ডোজও। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কোভিড পরবর্তী শারীরিক জটিলতা ছিনিয়ে নিল বর্ধমানের একটি ডেন্টাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্র ২৪ বছরের শুভম দাসকে। ঘটনায় বিস্মিত তাঁর সহপাঠীরা। ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের বঙ্গীয় শাখার সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাসের কথায়, “এমনটা যে হতে পারে ভাবতে পারছি না। শুভম মেধাবী ছাত্র। করোনার ছোবলে চিকিৎসক সমাজের অবস্থা কতটা মারাত্মক তারই প্রমাণ দিয়ে গেল ও।”
দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) টালিগঞ্জের বাসিন্দা শুভম বর্ধমানের একটি ডেন্টাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০২০ সালে কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন শুভম। সেড়েও উঠেছিলেন। তারপরেই কোভিড পরবর্তী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কোভিড পরবর্তী নিউমোনিয়া অত্যন্ত ভয়ানক। বিশেষ করে বর্ষীয়ান মানুষদের ক্ষেত্রে কোভিড পরবর্তী নিউমোনিয়া হলে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি সাংঘাতিক। সম্প্রতি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক নিউমোনিয়ার কারণে অজস্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও মারা গিয়েছেন কোভিড নিউমোনিয়াতে।
[আরও পড়ুন: অক্সিজেন পাইপলাইনে বরফ জমে বিপত্তি, সমস্যায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের রোগীরা]
বয়স অল্প থাকার কারণে সেই নিউমোনিয়া থেকে সেড়ে ওঠেন শুভম। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাঁকে ফের একবার ছোবল মারে। এই বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আবার কোভিড পজিটিভ হন। তারই মধ্যে নিয়েছিলেন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ। শুক্রবার কলেজ স্ট্রিটে ডাক্তারি পড়াশোনার বই কিনতে গিয়েছিলেন। আচমকাই সেখানে লুটিয়ে পরেন। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় বাড়িতে। বাঘাযতীনের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শুভমকে। সেখানেই ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন পুশ করেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে থেকে বাড়িতে এনে আর বেশিক্ষণ শ্বাস নিতে পারেননি শুভম। বাড়ির সোফাতেই লুটিয়ে পরেন তিনি। আকস্মিক এই মৃত্যুতে কোভিড পরবর্তী শারীরিক জটিলতার কারণই উঠে আসছে।
করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও ভয়ংকর ক্লান্তি, উদ্বেগ, অবসাদ, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা অসংখ্য রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এমনই করোনা থেকে সেড়ে উঠে নানান সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের পোস্ট-কোভিড ওয়ার্ডে ভরতি হচ্ছেন রোগীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফুসফুস, হার্টে বড়সড় প্রভাব পড়ছে। বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকিও। কোভিডের কারণে যাঁদের নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হয়, তাঁদের ২০ শতাংশের ফুসফুস আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে না। তেমন অসুখেই কি চলে গেল শুভম? তাঁর সহপাঠীরা জানিয়েছেন, মারণ ভাইরাস সুস্থ হওয়ার পরেও রেহাই দিচ্ছে না। এরপরেও যদি মানুষ সচেতন না হন চিকিৎসকরা নিরুপায়।
[আরও পড়ুন: কড়া নিয়মবিধির মাঝে রাজ্যে আরও কয়েকটি পরিষেবায় ছাড়, নয়া বিজ্ঞপ্তি নবান্নের]
চিকিৎসকরা বলছেন, শুভমের মতো অল্প বয়সি ছেলের আকস্মিক মৃত্যু প্রমাণ দিল করোনা থেকে সেড়ে উঠেও সাবধানে থাকতে হবে। এইমসের চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন, যে সব করোনা রোগীদের ভেন্টিলেশন বা অক্সিজেন দিতে হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তাঁদের ফুসফুসে ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। অনেকের ফুসফুসে ফাইব্রোসিস ধরা পড়ছে। যার ফলে ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি হচ্ছে।