ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তীব্র গরমের পাশাপাশি যানজট। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা দূষণ। এর দুই সাঁড়াশি চাপে নাকানিচোবানি খাচ্ছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ।
২০২০-র লকডাউনের পর একুশে কিছুটা ছাড়। বাইশে পুরোপুরি ছাড়। একেবারে স্বাভাবিক জীবন। ততদিনে রাস্তায় গাড়ি নেমেছে। বেড়েছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়ির সংখ্যা। দূষণও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, শহরে যেখানে যত বেশি যানজট হবে, গাড়ির গতি কমবে, সেখানেই দূষণের মাত্রা তত বেশি। তত তীব্র দহন।
চলতি মরশুমে এপ্রিলই এখনও পর্যন্ত বছরের সেরা গরমের ইনিংস খেলছে। পরপর তিন বছরে এপ্রিলের পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯-এর পর থেকে আবহাওয়া ভাল হচ্ছিল। তা আবার উলটোদিকে দৌড়াচ্ছে। দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ছ’গুণেরও বেশি।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা তৃণমূলের, ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়]
লকডাউনে প্রকৃতি নিজের ক্ষত সারিয়ে নিচ্ছিল। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, ২৪ ঘণ্টার হিসাবে প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটারের (দূষণের পরিমাপ) পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে কী হারে বদল হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে এর সহ্যসীমা থাকার কথা ৮০। সেখানে ২০২০ সালে ডানলপ মোড়ে এর পরিমাণ ছিল ২২ মাইক্রোগ্রাম। গিরিশ পার্কে ছিল ২৯ মাইক্রোগ্রাম। এসপ্ল্যানেডে ছিল ৪০ মাইক্রোগ্রাম। পরের বছর থেকেই দূষণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দেখা যায় ডানলপে বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৭২ থেকে ৭৪ মাইক্রোগ্রাম। গিরিশ পার্কে ছিল ৯০ থেকে ৯১। আবার এসপ্ল্যানেডে ছিল ৯৩ থেকে ৯৫ মাইক্রোগ্রাম।
এই বছর রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ অসংখ্য। সমস্ত যাত্রী পরিবহণ মাধ্যম রাস্তায়। ফলে সিগন্যালে যানজটও বেশি। তার মধ্যে দুপুরে সমস্ত স্কুল ছুটির সময় যানজট বেড়ে যায় দ্বিগুণ। একবার তাতে আটকালে অন্তত দু’ঘণ্টার জন্য যান চলাচলের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট। এই পরিস্থিতিতেই দেখা যাচ্ছে এবার পাল্লা দিয়ে পার্টিকুলেট ম্যাটার বাতাসে বেড়েছে হু হু করে। ২৫ এপ্রিলের পরিসংখ্যান বলছে ডানলপের বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২১ মাইক্রোগ্রাম। গিরিশ পার্কে ছিল ১৯২ মাইক্রোগ্রাম। এসপ্ল্যানেডে ছিল ১৫৫ মাইক্রোগ্রাম। পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, “গিরিশ পার্কে যানজট অত্যধিক থাকে। এখানে দূষণের পরিমাণ তাই বেশি।”
[আরও পড়ুন: জ্বলছে না আলো, চলছে না পাখা! তীব্র দাবদাহের মধ্যেই ১৪ দিন বিদ্যুৎহীন গ্রাম]
একইসঙ্গে সুদীপ্তবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, গাড়ি ধীরে চললেই ইঞ্জিনে জ্বলন কম হয়। গিয়ার বদলাতে হয় দ্রুত। আর এই গরমে বাতাসের গতি কম। তাতেই পার্টিকুলেট ম্যাটার উপরের দিকে উঠতেও পারছে না। তাঁর কথায়, “জ্বালানি কম পুড়লে বা আংশিক পুড়লেই বিপদ। না পোড়া বা আংশিক পোড়া জ্বালানি সেই অবস্থাতেই বাতাসে মিশতে থাকে। তাতেই বাড়তে থাকে দূষণ । ফলে যেখানে যত বেশি যানজট হবে, সেখানে দূষণের পরিমাণ তত বাড়বে।”