অর্ণব আইচ: মনোহরপুকুরে (Monohar Pukur Road) স্ত্রীকে খুন এবং মেয়েকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় অনুতপ্ত ধৃত অরবিন্দ বাজাজ। অপরাধ কবুল করেছে সে। পেশাদার খুনি নয় বলেই পুলিশকে জানায়। স্ত্রী দমিয়ে রাখার ফলে মানসিক অবসাদ গ্রাস করছিল তাকে। সম্পর্কে ক্রমে তলানিতে পৌঁছয়। তাই স্ত্রীকে খুন বলেও জেরায় জানায় অভিযুক্ত।
মনোহরপুকুরের পুষ্পক অ্যাপার্টমেন্ট (Pushpak Apartment) থেকে শনিবার সন্ধেয় ১০০ ডায়ালে একটি ফোন পায় পুলিশ। তড়িঘড়ি রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই আবাসন থেকে প্রিয়াঙ্কা বাজাজের দেহ উদ্ধার করা হয়। অরবিন্দ এবং প্রিয়াঙ্কার সন্তান আদ্ভিকাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। প্রথমে আটক করা হয় অরবিন্দকে। টানা জেরায় ভেঙে পড়ে। স্বীকার করে খুনের কথা। স্ত্রীকে কেন খুন করল, পুলিশি জেরায় তা জানায় অরবিন্দ। সে জানায়, স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দমিয়ে রাখতেন। বেসরকারি সংস্থা কর্মী অরবিন্দ ২০২০ সালে চাকরি হারায়। শ্বশুরের সিমেন্টের ব্যবসায় যোগ দেয়। চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকে শ্বশুর গোটা পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। তা দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠছিল। মানসিক অবসাদে ভুগছিল অরবিন্দ।
[আরও পড়ুন: কালীপুজোর দিন বদলাচ্ছে মেট্রো চলাচলের সময়সূচি, দক্ষিণেশ্বরের যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা]
খুব ছোটখাটো কারণে দাম্পত্য অশান্তি লেগেই থাকত। বেশ কয়েকদিন আগে টালিগঞ্জ থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। বিয়েতে তাঁর বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া সমস্ত সামগ্রী ফেরতের দাবি জানিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সেই মতো সব কিছু স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয় অরবিন্দ। দিনকয়েক আগে অরবিন্দ তাঁর আত্মীয়দের ই-মেল এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির কথা জানায়। স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য অনুরোধ জানায়। ইতিমধ্যেই শনিবার সন্ধেয় দীপাবলিতে পুজোর জন্য আলমারি থেকে বাসন বের করা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে অরবিন্দ। আলমারির চাবি দিতে পারেননি প্রিয়াঙ্কা। দাবি করেন তাঁর কাছে নেই। সঙ্গে সঙ্গে শ্বশুরকে ফোন করে অরবিন্দ। তিনি জানান, এক বন্ধুর কাছে চাবি আছে। তাতেই রেগে যায় অরবিন্দ। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ঝগড়ার মাঝে প্রায় দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায় সে। রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত ছুরি নিয়ে এসে স্ত্রীকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। তা দেখে ফেলেন বছর আঠারোর মেয়ে আদ্ভিকা। উত্তেজনার বশে মেয়েকে আক্রমণ করে অরবিন্দ। মেয়ে ১০০ ডায়ালে ফোন করার পর পুলিশ আসে। তখনই পুলিশ তাকে আটক করে।
অরবিন্দ বাজাজের বাবা এবং মায়ের মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। তার দিদি থাকেন টালিগঞ্জে। বাবার কেনা মনোহরপুকুরের ফ্ল্যাটেই স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়েই থাকত অরবিন্দ। দিদি ছাড়া আর কেউই নেই বলেই পুলিশি জেরায় জানায়।