অর্ণব আইচ: লোকটির নজর থাকত দূরপাল্লার সরকারি বাসের দিকে। কোনও যাত্রী ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে বসে উঠে একটু অন্যমনস্ক হলেই হল। কয়েক মিনিট পরই আর মিলত না ব্যাগের হদিশ! এভাবে ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ড থেকে চুরি যাচ্ছিল একের পর এক ল্যাপটপের ব্যাগ। অভিযোগও জমা পড়ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু চোরের সন্ধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুলিশের কাছে। শেষপর্যন্ত পুলিশ আধিকারিকরা যাত্রীর ছদ্মবেশে উঠলেন বাসে। এক পুলিশ আধিকারিক অন্যমনস্ক যাত্রী সেজে বাসের সিটে ব্যাগ রেখে নিচে চা খেতে গেলেন। পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দুষ্কৃতী ব্যাগটি চুরি করতে গিয়েই হাতেনাতে ধরা পড়ল ময়দান থানার বিশেষ টিমের হাতে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে পুলিশকে রীতিমতো ‘ঘোল খাইয়ে’ ছেড়েছিল মণিরুল ইসলাম নামে ওই যুবকটি। তার মূল টার্গেট ছিল কলকাতা থেকে দিঘা, হলদিয়া, আবার কখনও বা উত্তরবঙ্গের সরকারি বাস। মণিরুল বাসের দরজার কাছে নজর রাখত এমন যাত্রীদের উপর, যাঁদের কাছে রয়েছে ল্যাপটপের ব্যাগ অথবা এমন কোনও ব্যাগ, যাতে ল্যাপটপ থাকার সম্ভাবনা। ওই যাত্রী ব্যাগটি বাসে রেখে নিচে চা বা জল খেতে অথবা কেনাকাটা করার জন্য নামলে বা অন্য সিটে গিয়ে পরিচিত কারও সঙ্গে কথা বললে বাসে উঠে পড়ত মণিরুল। সবার অলক্ষ্যে ল্যাপটপের ব্যাগটি নিয়ে উধাও হয়ে যেত সে। তার পর সোজা বাস অথবা ট্রেন ধরে কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর আবার কখনও বা কুলতলি। সেখানে সস্তায় বিক্রি করত ল্যাপটপ। এভাবে প্রায় গোটা দশেক ল্যাপটপ চুরি করে সে।
[আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দলে নেই কেন রিঙ্কু? নির্বাচকদের তোপ প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনারের]
সম্প্রতি এক চিকিৎসক দূরপাল্লার বাসে উঠে ব্যাগ রেখে নিচে কিছু কিনতে যান। সুযোগ বুঝে মণিরুল তাঁর ব্যাগটি চুরি করে পালায়। ব্যাগে ছিল ল্যাপটপ, মোবাইল, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র। তিনি ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বাসস্ট্যান্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যার সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় পুলিশের তদন্তে অসুবিধা হয়। শেষপর্যন্ত ময়দান থানার পুলিশ একটি বিশেষ টিম তৈরি করে। হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে বাসযাত্রীর ছদ্মবেশেই বাসস্ট্যান্ডে ঘুরতে থাকেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেই ফাঁদে পা দেয় মণিরুল।
দিঘাগামী একটি বাসের সিটে ল্যাপটপের ব্যাগ রেখে নিচে নেমে দোকানে যান এক পুলিশ আধিকারিক। টিমের বাকিরা দূর থেকে নজর রাখেন। মণিরুল সেই ব্যাগ চুরি করতে এসেই হাতেনাতে ধরা পড়ে। তাকে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসকের ব্যাগ। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। তার চুরি করা বাকি ল্যাপটপ ও অন্য চোরাই জিনিসগুলি উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।