অর্ণব আইচ ও নব্যেন্দু হাজরা: ইভটিজাররা সাবধান। ক্রিসমাস ইভ থেকেই পার্ক স্ট্রিটে নামছে ‘স্পেশ্যাল ২৫’। ভিড়ের মধ্যে কেউ ইভটিজিং বা শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলেই তাকে ধরবে সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশের এই বিশেষ বাহিনী। সুরক্ষার জন্য বড়দিন ও বর্ষবরণে ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরায় তুলে রাখা হবে পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণিতে ঘুরতে আসা মানুষের ছবি ও ফুটেজ।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই পার্ক স্ট্রিট ও তার সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন রাত থেকেই পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণি এলাকার রাস্তায় নামছে মহিলা পুলিশের বিশেষ ২৫ জনের বাহিনী। ভিড়ের মধ্যে পার্ক স্ট্রিটে ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানির সম্ভাবনা থাকে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশের এই বিশেষ মহিলা টিম তৈরি করা হয়েছে। ওই টিমের ২৫ জন সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশকর্মী ও আধিকারিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন রাস্তায়। কোনও তরুণ ভিড়ের মধ্যে শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং করলে অথবা কোনও তরুণীকে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ধরবেন ওই টিমের সদস্যারা।
বড়দিনের জন্য প্রায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে পার্ক স্ট্রিটে। চৌরঙ্গি রোড ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল, মাদার টেরিজার মূর্তি এবং মিডলটন স্ট্রিট ও চৌরঙ্গির সংযোগস্থলে পুলিশবাহিনী নিয়ে থাকবেন তিনজন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক। এছাড়াও ডিসি (সাউথ) ও ডিসি (সাউথ) ২ বাহিনী নিয়ে এলাকাজুড়ে টহল দেবেন। থাকবেন মহিলা ডিসি। তাঁদের অধীনে প্রায় ৬৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবেন।
[আরও পড়ুন: আগামী বছর ১০ দিন আগে থেকে শুরু হবে দুর্গোৎসব, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
বর্ষবরণের সময় রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা বেড়ে হবে ৩ হাজার। বড়দিন ও বর্ষবরণের জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে সিসিটিভিতে মনিটরিং করা হবে। পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বাইনোকুলারে রাখা হবে নজরদারি। বছরের শেষে পার্ক স্ট্রিটে নজরদারির জন্য অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শেক্সপিয়র সরণি থানার পক্ষ থেকে মিডলটন স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি ও পার্ক স্ট্রিটের লাগোয়া রাস্তাগুলিতে ৩০ মিটার অন্তর ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা-সহ কর্মীদের মোতায়েন করা হচ্ছে। তার জন্য অতিরিক্ত ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা পুলিশ ভাড়াও নিচ্ছে। তাতে রাস্তায় যাতায়াত করার সময় প্রত্যেকের ছবি তোলা হবে। তাতে কেউ দুষ্কর্ম করলে তার সন্ধান পাওয়া সহজ হবে। আবার কেউ ইভটিজিং বা ছিনতাই করার ছক কষে, সে সেই কাজ থেকে বিরত থাকবে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে লালবাজারের কন্ট্রোলরুম থেকেও নজরদারি রাখা হবে। ড্রোনের মাধ্যমেও হবে নজরদারি।
ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণি এলাকার হোটেল ও রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। রেস্তরাঁর ভিতর যাতে কোনও গোলমাল না হয়, তার জন্য নিজস্ব নিরাপত্তাও জোরদার করতে বলা হয়েছে। রেস্তরাঁয় যাতে করোনা বিধি মানা হয়, তার উপর পুলিশ গুরুত্ব দিতে বলেছে। এদিকে, অ্যালেন পার্কের কাছ থেকে মাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে, যাতে রাস্তায় করোনাবিধি মানা হয়। প্রত্যেকে যেন মাস্ক পরেন ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা হয়। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অনেকেই হয়তো উৎসবের সময় মুখে মাস্ক রাখতে চাইবেন না। তাঁদের সতর্ক করা হবে। প্রয়োজনে মাস্কও বিলি করা হবে। মদ্যপান করে কেউ যাতে গাড়ি না চালায়, তার জন্য থাকবে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা। পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে সঙ্গে নিউ মার্কেট, বউবাজার থেকে শুরু করে বাইপাসের আশপাশেও বিশেষ নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বড়দিন উপলক্ষে মেট্রোয় যাত্রী চাপ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভিড় সামাল কীভাবে দেওয়া হবে, সে সংক্রান্ত পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই ছকে ফেলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে প্রবেশ এবং প্রস্থান পথ আলাদা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এখনকার মতো একই গেট দিয়ে যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন না। দমদমগামী যে যাত্রীরা পার্ক স্ট্রিটে নামবেন তাঁদের মেয়ো রোডের গেট দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ২৫ ডিসেম্বর বাড়ানো হতে পারে মেট্রোর সংখ্যাও। ইতিমধ্যেই ২২০টির বদলে ২৩০টি মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে ওইদিন। তাতেও সন্ধের দিকে যদি দেখা যায় যাত্রীচাপ বাড়ছে, সেক্ষেত্রে মেট্রোর সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে। দক্ষিণেশ্বর এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ৪টি করে মোট ৮টি বাড়তি টিকিট কাউন্টার খোলা হচ্ছে।