অর্ণব আইচ: চার হাত এক করলে জীবনের সেই লগ্ন মধুর হয়। কিন্তু চার পা? তাও এক করা যায় বুঝি! ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কলকাতা পুলিশ কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই কাজে। কিন্তু, চার পা এক করা কি চাট্টিখানি কথা?
কিন্তু কেনই বা এমন কাজে নামতে হল পুলিশকে? খান সাতেক শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, হাতে সময় কম। তাই এই মাসেই টপারের সঙ্গে ফ্লোরার ‘বিয়ে’ দিতে চান গোয়েন্দা পুলিশ আধিকারিকরা। আর তাতে সিলমোহর দিয়েছে লালবাজার।
[আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশার দাপটে উধাও শীত, কমল দৃশ্যমানতা, দমদম বিমানবন্দরে ব্যাহত পরিষেবা]
পাত্রের নাম টপার। বয়স চার। জাতে ল্যাব্রাডর। গায়ের রং হলদেটে সাদা। পেশায় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। আয় মন্দ নয়। আর পাত্রীর নাম ফ্লোরা। বয়স সাড়ে তিন বছর। গায়ের রং পাত্রের মতোই হলদেটে সাদা। তার পেশাও এক। অর্থাৎ সেও গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক খুঁজতে দক্ষ। তারও মাসমাইনে বাঁধা।
গোয়েন্দা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কলকাতা পুলিশের (Kolkata police) ডগ স্কোয়াডের ৪০ জন সদস্যের মধ্যে অনেক খুঁজেপেতে এই পাত্র ও পাত্রী বাছাই করা হয়েছে। তার কারণ শূন্যপদ পূরণ। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে ডগ স্কোয়াডে মোট কুকুরের পদের সংখ্যা এখন ৪৮। এর মধ্যে কর্মরত অবস্থায় ছিল ৪১টি। তার মধ্যে কিছুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে রোজা নামে একটি বেলজিয়ান শেফার্ডের। তার বদলে একই জাতের অন্য একটি কুকুর শাবক নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এরপরও সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। সাধারণভাবে ডগ ব্রিডারদের কাছ থেকে নতুন কুকুর শাবক কিনে নিয়ে আসে কলকাতা পুলিশ। তাতে অনেক খরচও হয়। এবার সেই খরচ এড়াতে ডগ স্কোয়াড (dog squad) চত্বরেই নিজস্ব কুকুর দিয়েই প্রজনন করানোর পরিকল্পনা করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগেও গোয়েন্দা কুকুরের প্রজনন হয়েছে। তবে ‘কনে’ পুলিশের হলেও ‘পাত্র’ ছিল বাইরের। এবার গোয়েন্দা আধিকারিকরা খতিয়ে দেখেন, ডগ স্কোয়াডের মধ্যেই রয়েছে প্রজননক্ষম কুকুর। কিন্তু তার জন্য বাছাইয়ের কাজও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘পাত্র-পাত্রী’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয় টপার ও ফ্লোরাকে। এরপর এই প্রস্তাব লালবাজারে পাঠানো হয়। প্রস্তাবে রাজি হন লালবাজারের গোয়েন্দা কর্তারা।
[আরও পড়ুন: মঙ্গলবারের বন্ধে কড়া প্রশাসন, গোলমাল রুখতে রাস্তায় নামছে ৪ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী]
এই যুগলের যে শাবকগুলি জন্ম নেবে বলে আশা করা হচ্ছে, সেগুলি কলকাতা পুলিশের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার ফলে শূন্যপদ পূরণ করার জন্য বাইরে থেকে আর কুকুর শাবক কিনতে হবে না। এছাড়াও শাবকগুলির তাদের মা-বাবার মতো গায়ের রং হলদেটে সাদা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কুকুরদের বয়স হলে অনেক সময় লোম পাকতে দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে কালো বা চকোলেট রঙের মধ্যে কিছু লোম সাদা বা ছাই রঙের হলে দেখতেও খারাপ লাগে। সেই কারণে হলদেটে সাদা রঙের টপার ও ফ্লোরাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখন থেকেই পাত্র-পাত্রী মেলামেশা শুরু করেছে। ধীরে ধীরে জমে উঠছে তাদের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা। মিলনের সময় হলে দু’জনের একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। নতুন অতিথির আশায় এখন থেকেই অপেক্ষায় পুলিশ।