অভিরূপ দাস: একই মঞ্চে। পাশাপাশি। একজনের মাথায় ফেজ টুপি। অন্যজনের গলায় উপবীত। একজন বললেন, ‘ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূ’। অন্যজনের কন্ঠে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি’।
মোতিঝিল লেনের ডা. হাজরা মসজিদের ইমাম আর ট্যাংরা শীতলা মন্দিরের পুরোহিত একই সঙ্গে শুরু করলেন কলকাতা পুরসভার উন্নয়ন যজ্ঞের। দুই ধর্মের ধর্মগুরুর মন্ত্রোচ্চারণে কাজ শুরু হল সংহতি সম্প্রীতি উদ্যানের। এই প্রথম পুরসভার কাজের শুরু মৌলবীর দোয়া পাঠ আর পুরোহিতের হোম যজ্ঞে।
৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে এন্টালির মতিঝিলে ৭ বিঘার জলাশয় কচুরিপানায় ঢাকা পড়েছিল। এলাকার বাসিন্দারা ময়লা ফেলতেন এখানে। আর নয়। কালীপুজোর মধ্যেই এন্টালির মতিঝিলে মাথা তুলবে টলটলে জলাশয় আর ঝকঝকে খেলার মাঠ। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, এন্টালির মতিঝিল এলাকায় ৭ বিঘার এই জলাশয় দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কচুরিপানা থেকে আবর্জনায় ঢেকে ছিল। এর পাশেই রয়েছে প্রায় দুই বিঘার বেশি জমি। পরিত্যক্ত সে জমি জঙ্গলাকীর্ণ। মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বিষয়টি জানান মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। ঠিক হয়, একদিকে জলাশয় ও অন্যদিকে খেলার মাঠ তৈরি হবে।
[আরও পড়ুন: ‘কালীঘাটের কাকু’-সহ তিনজনের বাড়িতে CBI, স্ক্যানারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন আপ্তসহায়কও]
বৃহস্পতিবার সেই সংস্কারের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মৌলবী এবং পুরোহিত। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পৌরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার। মেয়র পারিষদ তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, উন্নয়নের কাজে এমন সম্প্রীতির মেলবন্ধন প্রথম কলকাতা পুরসভাতেই।
উল্লেখ্য, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই জমি এলাকার মাথা ব্যাথার কারণ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার ফলে অসামাজিক কাজের জায়গা হয়ে উঠছিল তা। রাতে নেশাভাঙ চলতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, নতুন করে সেজে উঠলে সকালে রাতে স্থানীয়রা হাঁটতে আসবেন। বন্ধ হবে অসামাজিক দৌরাত্ম্য। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় মশার বাড়বাড়ন্তের অভিযোগও বহুদিনের। মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, সংস্কারের অভাবে জলাশয়টা মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। আবর্জনায় পুকুর বুজে যাচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছিল মশার প্রকোপ। নতুন খেলার মাঠের নাম হবে সংহতি সম্প্রীতি উদ্যান। জলাশয় সংস্কারের পর তার চার ধারে হাঁটার জন্য রাস্তা হবে। তৈরি হবে বসার জায়গা। চারপাশে থাকবে ঝা চকচকে এলইডি আলো।