shono
Advertisement

বাংলায় ফিরে এল কালাজ্বর, বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত মোট ৬৫

আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা।
Posted: 09:22 AM Jul 15, 2022Updated: 10:51 AM Jul 15, 2022

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আবার পশ্চিমবঙ্গে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব! প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়া কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে রাজ্যের অন্তত ১১টি জেলায়। স্বাস্থ্যভবনের প্রাথমিক তথ্য বলছে, রাজ্যের অন্তত ৬৫ জনকে কালাজ্বর আক্রান্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

Advertisement

মাটির স্যাঁতসেতে দেওয়াল বা মেঝেতে স্ত্রী বালিমাছি ডিম পাড়ে। সেই মাছির শরীরে বাস করে পরজীবী। তা থেকেই কালাজ্বর সংক্রমিত হয় মানবদেহে। রোগ নির্মূল করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের পাকাবাড়ি ও শৌচালয় করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। পাশাপাশি স্বাস্থ্যভবন থেকে এইসব এলাকায় লাগাতার সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকেই স্বাস্থ্যভবনের বিশেষজ্ঞদল কালাজ্বর প্রবণ এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছে। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন, “আক্রান্তদের চিহ্নিত করে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, “রোগীকে নিখরচায় যেমন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তেমনই এই মাস থেকে নিখরচায় মাসিক পুষ্টিকর খাবারও দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, রক্তপরীক্ষা করে আরও আক্রান্তের সন্ধান মিলতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও মৃতু্যর খবর মেলেনি। রোগীপিছু মাসে হাজার টাকার খাবার দেওয়া হবে।

[আরও পড়ুন: কুসংস্কারে বলি গৃহবধূ, সর্প দংশনের পর ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরই মৃত্যু]

স্যান্ডফ্লাই (Sandfly) বা বেলেমাছির শরীরে থাকা পরজীবী ‘কেমোটোমাস আার্জেন্টিনিস’ থেকে রোগ সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ ওজন কমে যায়, ১৪ দিনের বেশি জ্বর, লিভার বা প্লিহা বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা, খিদে কমে যাওয়া, বমিভাব এমন সব লক্ষণ থাকলে রক্তের বিশেষ ধরনের (আরকে-৩৯) পরীক্ষার মাধ্যমে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “কালাজ্বর কার্যত নির্মূল হয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কিন্তু কোভিড আবহে টানা নজরদারির কিছুটা ঘাটতি হওয়ায় বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।” ওই শীর্ষকর্তার কথায়, “মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশে দীর্ঘসময় কাটিয়ে আসা আক্রান্তদের থেকে রোগ ছড়ায়। এমনকী বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের শারীরিক উপসর্গ দেখে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালে রক্তপরীক্ষা করে শনাক্ত করা হয়। বেসরকারি কোনও ল্যাবরেটরি বা হাসপাতালেও যদি রোগ শনাক্ত হয় তবে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্যকর্তার গোচরে আনতে হবে। রোগীর চিকিৎসা এবং পথ্যের যাবতীয় ব্যয়ভার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর বহন করবে। গোটা বিষয়টি নজরদারি করবেন জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক।

রাজ্যের যেসব জেলায় কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা গিয়েছে তার মধ্যে মালদহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এছাড়াও দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কালিম্পং জেলায় সংক্রমণ অনেকটাই বেশি। এছাড়াও বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাতেও আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। আবার এডস বা যক্ষ্মা আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই রোগীদেরও রক্তের আরকে-৩৯ পরীক্ষা করে চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে রাজ্যে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের মধ্যে ১জন কালাজ্বর রোগী ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও স্বাস্থ্য দপ্তর যৌথভাবে রাজ্যে কালাজ্বর নির্মূল ঘোষণা করে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলায় রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ফের লাগাতার সমীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: রাস্তা মেরামতির দাবিতে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের, পরিস্থিতি সামলাতে ওসির ‘দাদাগিরি’!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement