অর্ণব আইচ: রবিবার রাত মানে আড্ডা, হাসিঠাট্টার আদর্শ সময়। রাত ১২টার আগে সেই আড্ডা ভাঙে না। ১৭ মার্চও গার্ডেনরিচের (Gardenrich) ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনের অভিশপ্ত বহুতলের দোতলায় সেই আড্ডা চলছিল। কে-ই বা জানত বন্ধুদের হাসি-মজার মেজাজ খান খান করে দেবে সেই বাড়িই? অথচ বাস্তবে ঘটে গেল সেই অনভিপ্রেত ঘটনাই। রাত ১১টা ৫০ নাগাদ নির্মীয়মাণ বহুতলটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে (Collapsed)। আর তার নিচে আটকে পড়েন এলাকার ব্যবসায়ী শেরু নিজামি। এখনও তাঁর খোঁজ চলছে। আত্মীয়, বন্ধু থেকে শুরু করে উদ্ধারকারী দল, সকলে মিলে ধ্বংসস্তূপ (Debris) থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে শেরুকে।
ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁতে তখনও কিছুটা বাকি। জে ৫১৩/৫, ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনের দোতলায় তখন আড্ডায় মশগুল শেরু ও তাঁর বন্ধুরা। আচমকা ভয়ংকর শব্দ এবং পায়ের নিচের মাটি সরে সোজা পাতাল প্রবেশ! সম্বিত ফিরতেই শেরু বুঝতে পারেন, তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়, বন্ধুদের ফোন করে শেরুর আর্তনাদ – ”ফাসা হুয়া হ্যায়, মুঝে নিকালো।” ব্যস, তার পর সব চুপ।
[আরও পড়ুন: ভোটপ্রচারে বায়ুসেনার চপার ব্যবহার মোদির! আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কমিশনে তৃণমূল]
সবাই মিলে তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজে নামা হয়। রাতে আসে এনডিআরএফ-এর (NDRF) দল। কিন্তু শেরুর খোঁজ মেলে না। তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন সকলে। কানে বাজছে তাঁর ভয় মেশানো কাঁপা কাঁপা গলা – ”ফাসা হুয়া হ্যায়, মুঝে নিকালো।” সোমবার বিকেল পর্যন্ত চার থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করা যায়নি। তার মধ্যে একজন শেরু নিজামি। তাঁদের জল, অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকার মেহতাব আলম বলছেন, ”মহল্লার বাসিন্দা শেরু। এমনিতে ব্যবসায়ী। কিন্তু এলাকায় সেবামূলক কাজ করেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
[আরও পড়ুন: বিজেপির টিকিটে লড়বেন! লোকসভা নির্বাচনের আগে ইস্তফা তেলেঙ্গানার রাজ্যপালের]
শেরুর খোঁজ নেই এখনও। এদিকে শেরুদের উদ্ধার করতে গিয়েই নিজে জখম হয়ে হাসপাতালের বিছানায় এলাকার যুবক মহম্মদ জানু। পেশায় রিকশাওয়ালা জানু রাতেও বাইরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। শব্দ পেয়েই তিনি ছুটে যান ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতলের কাছে। হাত লাগান আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করতে। কিন্তু তিনি পরোপকারী হলেও নিজে রক্ষা পেলেন না। মস্ত একটা চাঙড় ভেঙে পড়ল জানুর হাতের উপর। ডান হাতের হাড় ভেঙে চুরচুর প্রায়। এখন পাশের নার্সিংহোমে আইসিইউ-তে (ICU) ভর্তি ওই যুবক।
ছেলেকে এভাবে দেখে কেঁদে ভাসাচ্ছেন মা রাজিয়া বিবি। বলছেন, ”সংসারে ছেলেই একমাত্র রোজগেরে। এখন ছেলেকে কি আর সেভাবে ফিরে পাব?” গার্ডেনরিচের এক বহুতল বিপর্যয় শুধু বসতিবাসীর টালির ছাদগুলোই কেড়ে নেয়নি, ভাসিয়ে দিয়েছে আরও অনেককেই।