শুভঙ্কর বসু: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তৈরি মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা কাজ করতে যেভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, তা নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। যাদবপুরে (Jadavpur) তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার রশিদ মুনির খানকে শোকজ করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। আগামী ১৩ তারিখ এ নিয়ে শুনানি। ওইদিনের মধ্যেই রশিদ মুনির খানকে শোকজের জবাব দিতে হবে। সেদিন ওই ঘটনার সময়ে তিনি কী ভূমিকায় ছিলেন, তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শুক্রবারের শুনানিতে।
মে’র ২ তারিখ রাজ্যে বিধানসভার ভোটের ফল প্রকাশের পর একাধিক হিংসার (Post Poll Violence) ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেখানেই চলছে মামলার শুনানি। কোথায় কী ঘটনা ঘটেছে, তার বিস্তারিত জানার জন্য হাই কোর্টের নির্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। তারাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আদালতে। জুনের ২৪ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত পরিদর্শনের পর একটি রিপোর্ট জমা দেয় NHRC’র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব জৈনের নেতৃত্বাধীন এই দলটি। তবে শেষদিন অর্থাৎ ২৯ জুন যাদবপুরে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়েন কমিটির সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসায় কড়া হাই কোর্ট, আহতদের চিকিৎসা ও রেশনের ব্যবস্থার নির্দেশ রাজ্যকে]
ওইদিন দুপুরে যাদবপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে যান কমিশনের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে বিজেপির কর্মীরাও ছিলেন বলে খবর। কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বচসায় জড়ান স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, সদস্যদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে লাঠি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। অভিযোগ, তাঁদের লাঠির ঘায়ে জখম হয়ে ৭ জন হাসপাতালে ভরতি হন। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
[আরও পড়ুন: সাতসকালে ব্রিজ থেকে উদ্ধার যুবকের ঝুলন্ত দেহ, ব্যাপক চাঞ্চল্য খাস কলকাতায়]
আর শুক্রবার মামলার শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে ব্যাপক ক্ষোভ উগড়ে দেয় ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। বলা হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশের তৈরি হওয়ার কমিটি কাজ করতে গিয়ে এভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়েছে। অথচ রাজ্য়ের প্রতি নির্দেশ ছিল, তাঁদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে। কিন্তু বিক্ষোভের ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তা করা হয়নি। ওই এলাকায় যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ছিলেন, তিনি কী করছিলেন? অ্যাডভোকেট জেনারেলকে (AG) এই প্রশ্ন করেন বিচারপতিরা। AG জানান, ওই এলাকার দায়িত্বে যাদবপুরের ডেপুটি কমিশনার রশিদ মুনির খান। তা জানার পর পুলিশ অফিসারকে শোকজ করে হাই কোর্ট। এদিনের শুনানিতে মানবাধিকার কমিশনের তরফে আবেদন জানানো হয়, রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে আরও খানিকটা সময় দেওয়া হোক। তা মঞ্জুর করে বিচারপতিরা ১৩ জুলাই পর্যন্ত সময় দেন।