গোবিন্দ রায়: প্রায় এক যুগ হতে চলল স্ত্রীধন থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ কলকাতার সুচরিতা। শুধু তাই নয়, ডিভোর্সের পর থেকে মেলেনি খোরপোশও। এপর্যন্ত এই রকম আর কত সুচরিতা রয়েছে, এবার সেই প্রশ্নই তুলল হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। এই রকম কত মামলা বিচারাধীন? পরিসংখ্যান চেয়ে তাও জানতে চেয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়।
স্ত্রীধন নিজের অধিকার হলেও তা হাতে পেতে প্রায় কালঘাম ছুটে যাচ্ছে মহিলাদের। এমনকী, মামলা করেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিয়ের গয়না ফেরাচ্ছে না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিবাহ-বিচ্ছেদ হলেও খোরপোশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। এমনই ঘটনার সাক্ষী কলকাতা হাই কোর্ট।
[আরও পড়ুন: বছরের প্রথম দিনে মমতার বাড়িতে অভিষেক]
জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে নিউ গড়িয়ার বাসিন্দা সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিধাননগরের বাগুইআটির বাসিন্দা পেশায় আইটি কর্মী সঞ্জীব বসুর দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। অভিযোগ, বউভাতের রাত থেকেই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন সুচরিতা। তিনি সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও বিয়ের তিন বছর বাদে তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কোনওভাবেই সমাধান না হওয়ায় ২০১২ সালে ডিভোর্স নেন সুচরিতা। আলিপুর আদালত তাঁর বাপের বাড়ি থেকে আনা যাবতীয় গহনা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি, মাসে ত্রিশ হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু অভিযোগ, আদালতের নির্দেশের পরেও সেই সময় তাঁর বাপের বাড়ি থেকে আনা সামান্য জিনিসপত্র ও তাঁর যাবতীয় গয়না ফেরত দিতে অস্বীকার করে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে এনিয়ে মামলা হয়। মামলা চলাকালীন তাঁর স্বামী মালয়েশিয়ায় চলে যান বলে অভিযোগ। এমন অবস্থায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে মামলা লড়ে যাচ্ছেন সুচরিতা। গয়না পাওয়া তো দূরের কথা, ডিভোর্সের পর মিলছে না খোরপোশও। বর্তমানে মামলাটি চলছে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে।
মামলাকারীর আইনজীবী সাবির আহমেদের অভিযোগ, রেড কর্নার নোটিস থাকা সত্ত্বেও তাঁর স্বামী চলে গিয়েছেন মালয়েশিয়ায়। যুক্তির সাপেক্ষে প্রশ্ন তুলে আদালত জানতে চেয়েছে, রেড কর্নার নোটিস জারি থাকার পরেও কীভাবে দেশ ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছেন অভিযুক্ত? পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় এই মামলায় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে (Bidhannagar City Police) হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাই কোর্টের শীতের অবকাশের পর এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। সেসময় এমন মামলার সংখ্যা ঠিক কত সেই পরিসংখ্যান চেয়েছে আদালত।
যদিও আদালতে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, এই বিষয়ে চিঠি লেখা ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। ফলে আদৌ তাঁর স্বামী সঞ্জীব বসুকে দেশে আনা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, রাজ্যে পণের জন্য মহিলাদের উপর অত্যাচারের মামলা রুজু হয়েছে ৪০৬টি। পণের বলি হয়েছেন ৪২৭ জন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ৪৩৭ জন। শুধু এরাজ্যে এই চিত্র, যারা থানা পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। অনুমেয় আসল সংখ্যাটা আরও বেশি। শুধু সুচরিতা নন, এদেশের বহু মামলায় নারীরা তাঁদের অধিকার তো দূরের কথা, নিজের সম্পত্তিটুকুও হাতে পান না। বছরের পর বছর ধরে মামলা চলে কিন্তু সুচরিতারা বিচার পান না।