অভিরূপ দাস: হাইডোজ থেরাপি উইথ অটোলগাস স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন। বেসরকারি খাতে ক্যানসারের এই চিকিৎসার খরচ ১০ লক্ষেরও বেশি। সরকারিতে তাই হচ্ছে কার্যত বিনামূল্যে।
গুটিকয়েক ক্যানসার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে সারানো গেলেও অধিকাংশই ইউ টার্ন নিয়ে ঘুরে আসে। ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য অসুখকে চিরতরে নির্মূল করতে সরকারি হাসপাতালে সাহায্য বাড়াল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সরকারি সহায়তায় এবার বাংলার সরকারি হাসপাতালেও এইচডিটি! হাইডোজ থেরাপি উইথ অটোলগাস স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন। বেসরকারি হাসপাতালে যার খরচ লক্ষাধিক। সরকারিতে তাই হচ্ছে নামমাত্র টাকায়। সরকারি হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়।
সংক্রমণ ঠেকাতে, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের অন্যের ব্যবহৃত জিনিস ধরা বারণ। রোগীকে স্রেফ একটা চেয়ার কমোড, একটা থার্মোমিটার, দুটো গামলা আনতে বলছেন চিকিৎসক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ গত একবছরে 'হাইডোজ থেরাপি উইথ অটোলগাস স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন' ব্যবহার করে ১৫ জনকে ক্যানসার মুক্ত করা হয়েছে। আপাতত তাঁরা পর্যবেক্ষণে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল অঙ্কোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোন ক্যানসার ফিরে আসবে সেটা দেখলে বোঝা যায়।
চিকিৎসকের কথায়, "চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার সারাতে গেলে হাইডোজ কেমোথেরাপির প্রয়োজন। তাতে রোগীর অস্থিমজ্জা শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তার জন্য আগে রোগীর নিকট আত্মীয়র শরীর থেকে অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করতে হয়। এইটা শুনেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। নয়া হাইডোজ থেরাপি উইথ অটোলগাস স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রক্রিয়ার রোগীর শরীর থেকেই নেওয়া হয় রক্তের অঙ্কুর কোষ।" তিনি আরও বলেন, "আতঙ্কের কিচ্ছু নেই। ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্তে অঙ্কুর কোষটা শুধু সংগ্রহ করা হয়। যেভাবে প্লেটলেট নেওয়া সেই পদ্ধতিতে রক্তের অঙ্কুর কোষ সংগ্রহ করা হয়।"
মাঝবয়সি তো বটেই, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে একাধিক শিশু আসছে কলকাতা মেডিক্যালে। তাদের উপরেই এইচডিটি প্রয়োগ করে সুফল মিলেছে। ডা. স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "শিশুদের কিছু টিউমার আছে যা প্রচন্ড 'কেমো সেনসিটিভ।' কেমো দিলেই গলে যায়। অনেকেই ভাবে চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার সারে না। শিশুদের চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসারও ১০ থেকে কুড়ি শতাংশ নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু আবার ফিরে আসছে।" এখানেই ব্যবহার করা হচ্ছে নয়া পদ্ধতি। বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কেমোর ডোজ।
এমনভাবে ক্যানসারের কোষকে মারা হচ্ছে যা তা আর ঘুরে আসতে না পারে। প্রথমে একটা স্ট্যান্ডার্ড কেমো দেওয়া হচ্ছে। সাময়িক আরোগ্য লাভ করছে রোগী। এবার ক্যানসার রোগীরই অঙ্কুর কোষটা সংগ্রহ করে নেওয়া হচ্ছে। ফ্রিজিং পদ্ধতি ছাড়াই তিনদিন পর্যন্ত তাজা থাকে এই অঙ্কুর কোষ। সংগ্রহ করে তাকে রেখে দেওয়া হয়। এর পর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কেমো দেওয়া হচ্ছে রোগীকে। ডা. স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "এক্ষেত্রে টিউমারও গলল, রোগীর অস্থিমজ্জাও শুকিয়ে গেল। তার পরদিন ওই রেখে দেওয়া অস্থিমজ্জাটা দিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। ফলে সাপও মরল। লাঠিও ভাঙল না। নয়া পদ্ধতি বড়দের মাল্টিপল মায়োলোমা, হজকিনস লিম্ফোমা, বাচ্চাদের নিউরোব্লাস্টোমা, জার্মস সেল টিউমারে ব্যবহার করে সুফল মিলেছে।" ডা. স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আট থেকে বারোদিনের মধ্যে রক্ত অস্থিমজ্জা কাজ করতে শুরু করে। চিকিৎসার পর তিন মাস অন্তর অন্তর পরীক্ষা করে দেখা হয় রোগটা ঘুরে আসছে কি না।