অর্ণব আইচ: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে সিবিআইয়ের নজরে ৯০০ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ। তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ খুঁজতেই এবার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শিয়ালদহ আদালতে সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন সিবিআই। এই ফুটেজেই রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।
আর জি কর কাণ্ডে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড়ের জন্য ৮ দিনের আটটি ক্যামেরার মোট ৯০০ ঘণ্টার ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষার পর খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সূত্রের দাবি, এই ফুটেজকেই ডিজিটাল এভিডেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে তারা। এই ফুটেজ খতিয়ে দেখা সময়সাপেক্ষ বিষয়। সেকথা আদালতেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের চার্জশিট অনুযায়ী, লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগ থেকে উদ্ধার হওয়া ফুটেজ দেখেই সিবিআই জানতে পারে যে, গত ৯ আগস্ট ভোর ৩টে ২০ মিনিটে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় আর জি কর হাসপাতালের সামনে আসে। হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের গেটের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিবিআই জানতে পারে যে, ভোর ৩টে ৩৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৩টে ৩৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড পর্যন্ত দেখা যায় যে, সঞ্জয় রাই টি শার্ট ও জিনস পরে হেলমেট বাঁ হাতে নিয়ে ট্রমা সেন্টার বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা বলে। তখন তার গলায় ছিল ব্লু টুথ ইয়ারফোন। তার দু’ মিনিট পর ভোর ৩টে ৩৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে সে নিরাপত্তারক্ষীর দিকে হাত নাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়।
এর পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সঞ্জয়ের গতিবিধির উপর নজর রাখে। শেষ পর্যন্ত আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের কাছে তার গতিবিধি লক্ষ্য করেন সিবিআই আধিকারিকরা। পালমোনারি মেডিসিনের প্রবেশপথের একটি সিসিটিভির ফুটেজকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সিবিআই। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ভোর ৪টে ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ড থেকে ভোর ৪টে ৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের মধ্যে সঞ্জয় রায়কে হেলমেট ও গলায় ব্লু টুথ ইয়ারফোন নিয়ে ওয়ার্ডের দিকে যেতে দেখা যায়। ভোর ৪টে ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ১৪ সেকেন্ডের মধ্যে সঞ্জয়কে ওয়ার্ডের দিক থেকে আসতে দেখা যায়।
ফের সে ওয়ার্ডের দিকে ঘুরে যায় বলে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জানতে পারে সিবিআই। এর কয়েক সেকেন্ড পরই অর্থাৎ ভোর ৪টে ৩২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে সঞ্জয়কে ফের ওয়ার্ডের দিকে থেকে বাঁ হাতে হেলমেট নিয়ে আসতে দেখা যায়। কিন্তু তখন তার গলায় ব্লু টুথ ইয়ারফোনটি ছিল না। সিবিআইয়ের দাবি, ওই সময়ের মধ্যেই সঞ্জয় সেমিনার হলে ঢুকে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ ও খুন করে।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের গতিবিধি জানা গেলেও তথ্য প্রমাণ লোপাটের হদিশ এখনও মেলেনি। সেই প্রমাণ খুঁজতেই এবার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে সিবিআই।