অর্ণব আইচ: ৪৭ মাসে ১৫ শতাংশ সুদে ফেরত দেওয়া হবে লাখ লাখ টাকা। তাতে কোনও সমস্যা হলে জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে টাকা ফেরৎ। এসএসসি (SSC) দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানো গোপাল দলপতির স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় এই পদ্ধতিতে টাকা তুলত গোপাল দলপতির চিটফান্ড সংস্থা, এমনই খবর এসেছে সিবিআইয়ের (CBI) কাছে। কিন্তু লগ্নিকারীদের কাছ থেকে খবর নিয়ে সিবিআই জেনেছে, কেউই প্রায় টাকা ফেরত পাননি।
এদিকে, এমন খবরও তদন্তকারীদের কাছে এসেছে যে, জমিগুলি সবার অলক্ষ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এলাকার এজেন্টদের সাহায্য নিয়ে। এই তথ্যগুলি তদন্তকারীরা যাচাই করছেন। এই চিটফান্ডের রমরমা অবস্থায় হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের (Haimanti Ganguly) সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন গোপাল দলপতি। চিটফান্ডের জন্য টাকা তোলার ব্যাপারে গোপালের স্ত্রী মডেল তথা অভিনেত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের কী ভূমিকা ছিল, এই বিষয়গুলি সিবিআইয়ের সঙ্গে সঙ্গে খতিয়ে দেখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেকটও (ED)। বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার কলকাতায় আসার পর গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরা দেবেন কি না, সেদিকেও নজর রয়েছে সিবিআইয়ের।
[আরও পড়ুন: প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে সাগরদিঘিতে বাজিমাত, জেনে নিন কে এই বায়রন বিশ্বাস?]
সিবিআই জানিয়েছে, হাওড়া, মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় ২০১২ সালের পর থেকেই রমরমা চিট ফান্ডের কারবার শুরু করেন গোপাল দলপতি। তখনও তিনি আরমান গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে ওঠেননি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ততদিনে বিয়ে হয়ে গিয়েছে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের। সিবিআইয়ের কাছে খবর, যে চিটফান্ড সংস্থাগুলির মাধ্যমে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়, সেগুলির ঠিকানা উল্লেখ করা ছিল উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে (Allahabad)। ওই চিটফান্ডে লগ্নি করানোর জন্য গোপাল দলপতি বিভিন্ন জেলার এলাকাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ করেন। আমানতকারীরা যাতে ওই চিটফান্ডে টাকা লগ্নি করেন, তার জন্য উদ্যোগ নেন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি নিজেও গ্রামে গিয়ে এজেন্ট ও লগ্নিকারীদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাঁদের বলা হত, এই চিটফান্ডের সঙ্গে প্রতারণার কোনও সম্পর্ক নেই। অনেকটা শেয়ার কেনার পদ্ধতিতেই টাকা নিয়োগ করতে হবে। একেকটি শেয়ারের মূল্য একশো টাকা করে।
[আরও পড়ুন: গরু পাচার মামলা: বিপাকে অনুব্রত মণ্ডল, দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরার অনুমতি পেল CBI]
এভাবে পাঁচশো থেকে দেড় হাজার শেয়ার কিনতে বলা হত। সেইমতো একেকজন লগ্নিকারী ৫০ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার টাকা, দেড় লাখ টাকা লগ্নি করতেন। তাঁদের সংস্থার নামে শংসাপত্র দেওয়া হত। সেই শংসাপত্রগুলিতে থাকত গোপাল দলপতির সই। সিবিআই জেনেছে, প্রথমদিকে অনেকেই সংস্থার উপর ভরসা করতে চাননি। তাই চিটফান্ড সংস্থার নামেই গোপাল দলপতি, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়রা বিভিন্ন এলাকায় বিঘা বিঘা জমি কিনতে শুরু করেন। এরকম কয়েকশো বিঘা জমি কেনা হয়। এজেন্টরা আমানতকারীদের বলেন, সংস্থার নিজস্ব জমিতে অনেক কিছু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাতে আমানতকারীদের পরিবারের লোকেরা চাকরিও পেতে পারেন। কখনও যদি সংস্থাটি টাকা ফেরৎ দিতে না পারে, তবে জমি বিক্রি করে টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তার উপর ভরসা করে একেকজন আমানতকারী দু’লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করেন। কিন্তু ৪৭ মাস বা চার বছর পেরিয়ে আরও বহুদিন পরও সুদ বা আসল টাকা কোনওটিই পাননি আমানতকারীরা।
ইতিমধ্যে দিল্লির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন গোপাল। পরে তিনি জামিনও পান। শেষ পর্যন্ত ভোলবদলে গোপাল হন আরমান গঙ্গোপাধ্যায়। টাকা ফেরতের ব্যাপারে এজেন্টরাও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকী, লগ্নিকারীদের কাছ থেকে সিবিআই খবর পেয়েছে যে, সংস্থার নামে থাকা জমিগুলিও বিক্রি হয়ে গিয়েছে গোপাল দলপতি ও হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে গোপাল দলপতিকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।