নিরুফা খাতুন: বড়তলায় পথশিশুর যৌন নির্যাতনে অপরাধীর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। ৭ মাসের শিশুকে ফুটপাথে যৌন নিগ্রহ বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ, আদালতে সওয়াল করেছিলেন সরকারি আইনজীবী। তাঁর যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয় আদালতও। মামলা শুরুর ৪০ দিনের মধ্যে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল আদালত। তবে অপরাধী চাইলে এই রায়কে চ্যালঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে পারে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর, বড়তলা থানা এলাকার এক বাসিন্দা দেখেন বাড়ির সামনে ফুটপাথে শুয়ে তারস্বরে কাঁদছে এক দুধের শিশু। আশপাশে কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করেন তিনি। একই সময় ফুটপাথবাসী এক দম্পতি তাঁদের সন্তানের খোঁজ শুরু করেন। খোঁজ পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পরে বোঝা যায়, ফুটপাথে কাঁদতে থাকা শিশুটিকে ওই ফুটপাথবাসী দম্পতিরই সন্তান। একরত্তিকে সঙ্গে সঙ্গে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখা যায় দুধের শিশুটির গোপনাঙ্গে একাধিক ক্ষতর চিহ্ন রয়েছে। এমনকী, সারা শরীরেও একাধিক আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। বোঝা যায়, শিশুটিকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। ঘৃণ্য অপরাধীকে ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বড়তলা থানা, কলকাতা পুলিশের নর্থ ডিভিশন এবং গোয়েন্দা দপ্তর।
এদিন রায় ঘোষণার পর বড়তলা থানার তদন্তকারী আধিকারিক জানান, তদন্তে নেমে প্রথমে ১৯ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। দু-তিনদিন ধরে সেই ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। গেইট প্যাটার্ন এবং গুগল আর্থ ম্যাপিং ব্যবহার করে ভবঘুরে রাজীব ঘোষ ওরফে গোবরাকে চিহ্নিত করা হয়। তারপর তার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের প্রায় সব থানায়। ডিসেম্বরের শুরুতেই সূত্র মারফত খোঁজ মেলে রাজীবের। খবর মেলে, ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে গাঢাকা দিয়েছে সে। একটি হোটেলে কাজও নিয়েছে। ছদ্মবেশে ওঁত পাতে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। ৪ ডিসেম্বপ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৬ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সাক্ষীদের তালিকায় ছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারও। গত বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি শেষ হয়। সোমবার আদালত রাজীব ওরফে গোবরাকে দোষী সাব্যস্ত করে। মঙ্গলবার রাজীব ঘোষের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল আদালত।
