shono
Advertisement

Corona Virus: করোনা কালে মনিবের আয় বন্ধ, কার্যত অনাহারে কলকাতায় মৃত্যু ৫ ঘোড়ার

ব্যক্তি মালিকানায় থাকা ঘোড়াদের খাওয়ানো পুলিশের দায়িত্ব নয়, দাবি লালবাজারের।
Posted: 11:36 AM Jul 17, 2021Updated: 11:40 AM Jul 17, 2021

নিরুফা খাতুন: দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial)। প্রায় শুনশান গড়ের মাঠ। ঘোড়ার জুড়ি গাড়ির রাজপথে ছোটার আওয়াজ নেই কয়েকমাস। আয় প্রায় নেই মনিবের। এই অবস্থায় তাঁদের প্রিয় পোষ্যের খাদ‌্যাভাব প্রকট। অভিযোগ, নিয়মিত খাবার না পেয়ে মৃত ৫টি ঘোড়া।‌‌

Advertisement

সেই কবে থেকে বিকেল হতেই গড়ের মাঠ, গঙ্গাতীরে হাওয়া খেতে বেরনো শহরবাসীর অভ্যাস। ফিটন-টমটমের দিন গেলেও সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে সামসুল, হায়দার, সামাদরা। ওদের রাংতা মোড়া এক্কা গাড়ির বেজায় কদর পর্যটকদের মধ্যে। ভিক্টোরিয়া গেটের সামনে সারি দিয়ে থাকে ঘোড়ার গাড়িগুলো। ট্রিপপিছু তিনশো থেকে চারশো টাকা আয় হয় মালিকদের। অন্য অনেক কিছুর মতো লকডাউন শুধু সেই সামাদ-কায়ুমদের পেটের ভাতই কাড়েনি, কেড়েছে তাঁদের পোষ্য ঘোড়ার দানাপানিও। ১৬ মে থেকে রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। তারও একমাস আগে ১৬ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে। তারপর থেকে রুজিরুটি বন্ধ এই চত্বরের ঘোড়ার গাডির মালিকদের। মালিকদের আয় ভাল হলে ঘোড়ারও ভাল খাবার জোটে। এখন মালিকের নিজের পেটের ভাতেরই জোগাড় নেই। ঘোড়ার ঘাস-বিচালি আসবে কী করে!

[আরও পড়ুন: কলকাতায় ডাকাতির ছক JMB’র? লিংকম্যান রাহুলের কাছে এসে থেকেছিল বাংলাদেশের জঙ্গি]

হেস্টিংসের বিদ্যাসাগর সেতুর নিচে ঘোড়া এবং মনিবদের অস্থায়ী ঠিকানা। এখানে আস্তানা প্রায় ৩৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ৬০টি ঘোড়ার। এক-একটি গাড়ির জন্য থাকে দু’টি ঘোড়া। লকডাউনে অনাহারে এবং বিনা চিকিৎসায় ক’দিন আগে মৃত্যু হয়েছে মুহাম্মদ সামাদের একটি ঘোড়ার (Horse)। তিনি বলেন, “ঘোড়ার খাবারের পিছনে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়। তার উপর ওষুধ, ডাক্তার খরচ আলাদা। কিন্তু প্রায় তিনমাস ব্যবসা বন্ধ । নিজেদের খাওয়ার টাকা নেই। ঘোড়াকে কী খাওয়াব? একটিমাত্র ঘোড়া ছিল। না খেতে পেয়ে এ মাসে মরে গেল। জানি না, কী করব সামনের দিনে।” সামাদের মতো এখানে ঘোড়া হারিয়েছেন মুহাম্মদ কাইয়ুম। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ঘোড়ার ঘাস, ছোলা, ভুসি খাওয়াতে হয়। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘোড়ার সেই খাবার কিনতে পারছি না। মাঠের ঘাস খেয়ে ক’দিন পেট ভরিয়েছে। কিন্তু সারা বছর পেট ভরানোর মতো শহরে এত ঘাস কোথায়? ঘোড়ার ঘাসের জোগান দিতে আগে ঘাস কিনে এনে খাওয়ানো হত। এখন ঘাস কেনার টাকাও নেই। ঠিকমতো খাবার না পেয়ে দু’টি ঘোড়ার মধ্যে একটি ঘোড়া দিন কুড়ি আগে মারা গেল।”

হেস্টিংস ছাড়া রাজাবাজারও একটা ঘোড়ার গাড়ির চেনা ঠেক। এই লকডাউনের মধে্য ঘোড়া মারা গিয়েছে সেখানেও। রাজাবাজারবাসী এমনই এক ঘোড়া-মালিক শেখ আসগর জানান, গত বছর থেকে আমাদের ব্যবসা মন্দা। গত বছর লকডাউনে সবথেকে বেশি ঘোড়া মারা গিয়েছিল। এ বছর দু’টি ঘোড়া মারা গিয়েছে। পর্যটক ছাড়া বিয়েবাড়িতে ভাড়া জোটে ঘোড়ার গাড়ির। কিন্তু করোনার প্রকোপে সেই বিয়েবাড়ির ভাড়াও মিলছে না। গত বছর লকডাউনে হেস্টিংসে প্রায় সাতটি ঘোড়া মারা গিয়েছিল। এর মধ্যে ঘোড়ার মালিক মুহাম্মদ সাত্তারের দু’টি ঘোড়া ছিল। তিনি বলেন, তিনটি ঘোড়া ছিল। গত লকডাউনে দু’টি মারা গিয়েছে। এখন একটি ঘোড়া রয়েছে। আর একটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিলাম। ঠিকমতো খেতে না পাওয়ায় তাদের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।

জানা যাচ্ছে, গত বছর লকডাউনে রাজ্য বনদপ্তর থেকে ঘোড়ার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে গিয়ে ঘোড়ার খাবার দিয়ে এসেছিলেন। কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের পক্ষ থেকেও খাবার দেওয়া হয়েছিল। ঘোড়ার মালিকরা জানান, এবার ঘোড়ার জন্য সরকারি কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও সহযোগিতা আসেনি। এ প্রসঙ্গে লালবাজারের বক্তব্য, ব্যক্তি মালিকানায় থাকা ঘোড়াদের খাওয়ানো দেখভাল পুলিশের দায়িত্ব নয়। তবু গত বছর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোড়ার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়া ময়দানে ঘাস খাওয়ানোর অনুমতি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১৮০টির মতো ঘোড়া ঘাস খায়। জুলাই থেকে ভিক্টোরিয়ার উদ্যান খোলা হয়েছে। সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে উদ্যানে। তবে মিউজিয়াম বন্ধ রয়েছে। ঘোড়ার গাড়ির মালিকরা বলেন, ভিক্টোরিয়ার উদ্যান খোলা হলেও পর্যটক আসছে না। পর্যটক না আসা পর্যন্ত আমাদের দুরবস্থা কাটবে না।

[আরও পড়ুন: ফের Delhi সফরে রাজ্যপাল Jagdeep Dhankhar, কারণ নিয়ে জোর জল্পনা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement