স্টাফ রিপোর্টার: গ্রেপ্তারির পর কলকাতা পুলিশের হেফাজতে ভুয়ো সেনা অফিসার (Fake Army Officer)। কিন্তু তার পরও দেদার বিক্রি হয়ে চলেছে ওই ভুয়ো সেনা অফিসারের ‘ভুয়ো বই’-এর।
‘ভারতীয় সেনা কী অনকহি কহানিয়া’। লেখকের নাম লেফটেন্যান্ট শিবম পাণ্ডে (Shivam Pandey)। বইটির দাম ২৩৪ টাকা। কিন্তু অনলাইনে কিনলে ১৬৪ টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে বইটি। আবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে নিলে অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ ছাড়। ভারতীয় সেনাদের নিয়ে লেখা এই বইটি হিন্দি পড়তে বা বুঝতে পারেন, এমন মানুষের মধ্যে চাহিদা বিপুল। বিশেষ করে ভারতীয় সেনার সঙ্গে যুক্ত ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনেক কিছু যাঁরা জানতে চান, তাঁদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যার মানুষ অনলাইন বিপণিতে অর্ডার দিয়ে কিনছেন এই বই।
[আরও পড়ুন: ‘বন্ধু’দের মারধরে প্রাণহানি! খাস কলকাতায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে বিস্ফোরক অভিযোগ পরিবারের]
আবার দোকানে গিয়ে লেফটেন্যান্ট শিবম পাণ্ডের বইয়ের খোঁজ করছেন, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সেই ক্রেতাদের হয়তো জানাই নেই যে, জালিয়াতির অভিযোগে ওই ‘লেখক’ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ও সেনা গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে। সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা হাতানো থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে ও পোশাক পরে নিজেকে সেনাকর্তা বলে পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা শিবম পাণ্ডে নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তার আরও চার সঙ্গীও গ্রেপ্তার হয়েছে কলকাতা পুলিশের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট থানার পুলিশ।
তদন্ত শুরু করার পর ওই সেনাকর্তা ‘লেফটেন্যান্ট শিবম পাণ্ডে’র বইটি দেখে হতবাক হন পুলিশ আধিকারিকরা। মাত্র ২৬ বছর বয়সের ওই ভুয়ো সেনাকর্তা যেভাবে সেনাবাহিনীর ‘না বলা গল্প’ হিন্দিতে বইয়ের আকারে তুলে ধরে, তাতে তার প্রতিভা নিয়েই আলোচনা শুরু হয় পুলিশমহলে। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকদের ভুল ভাঙে ফোর্ট উইলিয়ামের সেনাকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। কারণ, শিবম পাণ্ডে ধরা পড়ার পরপরই তার পরিচয় থেকে শুরু করে বইয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করে সেনা। তাতেই দেখা যায় যে, ভুয়ো সেনাকর্তা শিবম পাণ্ডের ‘ভারতীয় সেনা কী অনকহি কহানিয়া’ বইটিও আসলে ভুয়া। সেটি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল সতীশ দুয়ার লেখা বিখ্যাত ‘আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দ্য ইন্ডিয়ান আর্মি’ (Untold stories from the Indian Army) বইটির হিন্দি অনুবাদ বললেও ভুল হয় না।
[আরও পড়ুন: ১৮ বছরেও কাজ এগোয়নি, সিবিআই দায়িত্ব ছাড়লে হারানো নোবেল খোঁজার তদন্তে তৈরি রাজ্য]
ওই সেনাকর্তার বইটি হিন্দি ‘অনুবাদ’ করে সেটি ভুয়ো সেনাকর্তা নিজের নামে চালিয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এমনকী সার্চ ইঞ্জিনেও ভুয়া সেনাকর্তা শিবম পাণ্ডে যে একজন লেফটেন্যান্ট, তা-ও বলে আছে। তার সম্পর্কে তথ্য, সে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির ছাত্র। এমনকী, আর্মি ওয়ার কলেজ ও দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে সে ‘হায়ার কম্যান্ড কোর্স’ করেছে। ২০১৭ সালে জম্মু ও কাশ্মীর লাইট ইনফ্যান্ট্রিতে সে ‘কমিশনড’ হয়। এর পর শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রির অষ্টম ব্যাটালিয়নের দায়িত্বেও ছিল সে। পুলিশের অভিযোগ, নামী সার্চ ইঞ্জিনে তার এই পরিচয় দেখে বিশ্বাস করে ফেলে বহু মানুষ। তাই সেনাবাহিনীতে চাকরির টোপ দিয়ে টাকা হাতানোয় সুবিধা হত ওই ব্যক্তির। তাকে জেরা করে কলকাতার এজেন্টদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।