অভিরূপ দাস: পিঁপড়ের আকারের ছোট ছোট চারটে ফুটো। আর একটা আড়াই ইঞ্চি গর্ত নাভির পাশে। তার মাধ্যমেই শরীরে বসল অন্য মানুষের কিডনি। সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। পূর্ব ভারতে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করল রোবট। এই শহরেরই বাসিন্দা বছর ৪৫-এর হরিহর হালদারের (নাম পরিবর্তিত) কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। বহুদিন ধরেই ডায়ালিসিস চলছিল তাঁর।
রক্ত থেকে অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্যকে বের করে দেওয়াই কিডনি বা বৃক্কের কাজ। হরিহরের কিডনির এই পরিস্রুত করার ক্ষমতা চলে গিয়েছিল। ফলে শরীরে প্রচুর তরল ও বর্জ্য জমা হয়ে যাচ্ছিল। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন কিডনি প্রতিস্থাপন অবশ্যম্ভাবী।
অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র ল্যাপ্রোস্কোপিক এবং রোবোটিক ইউরোলজিক্যাল সার্জন ডা. বিনয় মহীন্দ্রার কথায়, ‘‘কিডনি যখন তার একশোভাগ কাজের মধ্যে মাত্র এক ভাগ সম্পন্ন করতে পারে তখন সেটাকে বলা হয় শেষ পর্যায়ের কিডনির রোগ। কিডনি এই পর্যায়ের বিকল হলে রুগিদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয়। হরিহরবাবুরও সেটাই চলছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রয়োজন ছিল কিডনি প্রতিস্থাপন।’’
[আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষ ‘অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র’, কটাক্ষ পুরুলিয়ায় বহিষ্কৃত ৩ BJP নেতার]
সেইমতোই শুরু হয় হরিহরবাবুর জন্য কিডনি দাতা খোঁজার কাজ। অতি সম্প্রতি খোঁজ মেলে এক কিডনি দাতার। কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার শুরুর আগেই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় চিন্তায় ফেলে দেয় চিকিৎসকদের। সাধারণভাবে শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে গেলে তলপেটে বড়সড় একটা গর্ত করতে হয়। তা না হলে পাঁচ ইঞ্চি কিডনিকে শরীরের ভেতর বসানো যায় না। এভাবে গর্ত করলে রক্তক্ষরণ হয় প্রচুর। দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালিসিস চলা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হরিহরবাবুর শরীর সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে?
অগত্যা প্ল্যান বি। চিকিৎসকরা ঠিক করেন রোবোটিক্সের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে এই অস্ত্রোপচার। মাত্র আড়াই ইঞ্চি একটা ফুটো করা হয় নাভির পাশে। আরও চারটে ছোট্ট ছোট্ট পিঁপড়ের সাইজের গর্ত করা হয় তলপেটে। তাতেই কাজ হাসিল। এতে রক্তক্ষরণ ছিটেফোঁটা। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনে এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি রক্তক্ষরণ হয়।
গত শনিবার অস্ত্রোপচার শুরু করেন চিকিৎসকরা। অক্টোপাসের মতো যান্ত্রিক হাতে শুরু হয় জটিল সার্জারি। দূরে একটা স্ক্রিনে বসে সেই অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন, ডা. বিনয় মহীন্দ্রা। সহকারী ছিলেন ডা. ত্রিদিবেশ মণ্ডল। সাধারণ কিডনি প্রতিস্থাপনের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগে ঠিকই, কিন্তু রোবোটিক্স প্রতিস্থাপনে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে অনেক দ্রুত।
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা: কাঁকুড়গাছির নিহত BJP কর্মীর DNA পরীক্ষার নির্দেশ হাইকোর্টের]
হাসপাতালের সিনিয়র ল্যাপ্রোস্কোপিক এবং রোবোটিক ইউরোলজিকাল সার্জন ডা. বিনয় মহীন্দ্রার কথায়, ‘‘আর পাঁচটা প্রতিস্থাপনের মতো প্রথম ধাপটা একই রকম। ডোনার অথবা অঙ্গদাতার শরীর থেকে কিডনি বের করতে হয় অতি সন্তর্পণে। এরপর বছর ৪৫—এর হরিহর হালদারের শরীরে কিডনিটি বসানো হয়। আপাতত আগামী ৭২ ঘণ্টা কড়া পর্যবেক্ষণে থাকবেন হরিহরবাবু।’’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অক্লেশে আগামী ২০-২৫ বছর সুস্থভাবে বাঁচতে পারবেন তিনি। প্রথম তিন মাস সপ্তাহে এক বার তাঁকে চেকআপে আসতে হবে। পরের তিন মাস দু’ সপ্তাহে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই যথেষ্ট। চিকিৎসকরা বলছেন, পূর্বভারতে হরিহরবাবুই প্রথম, যাঁকে নতুন জীবন দিল যন্ত্রমানব।