ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অনেকেই বিষয়টা জানতেন। নিয়মমতো তাঁরা আবেদনও করেছিলেন। বছরে এমন সুযোগ মাঝেমাঝেই আসে। কিন্তু যাঁদের সম্যক ধারণা ছিল না, তাঁরাই এমন আবদার ধরেছেন। চিড়িয়াখানার বাঘ-হরিণ দত্তক নেওয়া যাবে শুনে এক মুহূর্ত দেরি করেননি। আবেদন পেয়ে যখন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে, তাঁদের প্রথম প্রশ্ন, “হরিণ বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুষতে পারব তো?” আপাতত তাঁদের দত্তকের পদ্ধতি বোঝাচ্ছেন বন দফতরের কর্তারা।
মাস দুয়েক আগে নতুন করে পশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া জনসাধারণের জন্য খুলে দেয় রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (Alipore Zoological Garden)। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২৩ জন এমন আবেদন করেছেন। কেউ নিতে চেয়েছেন রয়্যাল বেঙ্গল। কারও পছন্দ হরিণ। কেউ আবার বিদেশি পাখি পছন্দ করেছেন। এসব পশুপাখি দত্তক নেওয়ার নির্দিষ্ট বার্ষিক মূল্য আছে। একটি বাঘ দত্তক নিলে বছরে তার জন্য ব্যয় করতে হবে দু’ লক্ষ টাকা। হরিণের জন্য ৩০ হাজার টাকা। যে কোনও পাখির জন্য বার্ষিক ব্যয় পঁচিশ হাজার। কিন্তু এসব দত্তক নেওয়া মানেই যে, তাদের বাড়ি নিয়ে পোষ্য বানানো নয়, প্রত্যেককে তা বলে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী রাজি হয়ে প্রথামতো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার দিকে এখনও পর্যন্ত এগিয়েছেন ১২ জন। দত্তক নেওয়ার আবেদনে সব থেকে বড় সংখ্যায় এগিয়ে আছে রয়্যাল বেঙ্গল। সূত্রের খবর, আলিপুর চিড়িয়াখানার পাঁচটি বাঘ (Royal Bengal Tiger) দত্তক নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে স্থানীয় একজনই এই পাঁচটি বাঘের অভিভাবক। যিনি দত্তক নিলেন বছরভর এদের খাঁচার বাইরে তাঁদের ছবি দেওয়া থাকবে। সময়মতো এসে বাঘেদের খাওয়া-দাওয়া বা তাদের দেখভালের সাক্ষী হতে পারবেন এঁরা। মাস কয়েক আগে ঠিক এভাবেই অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত দত্তক নিয়েছিলেন আলিপুরের বিখ্যাত শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’কে।
[আরও পড়ুন: এবার ভক্তদের জন্য দু’বেলাই খুলবে Kalighat মন্দির, মিলবে গর্ভগৃহে প্রবেশের অনুমতি]
আলিপুরের দু’টি বিদেশি পাখিও এর মধ্যে দত্তক নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ সাফারি পার্ক থেকেও পাঁচটি পশু দত্তক নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি লেপার্ড ক্যাট, একটি ফিশিং ক্যাট ও আরেকটি জঙ্গল ক্যাট। বাকি দু’টির মধ্যে একটি চিতল ও আরেকটি সম্বর হরিণ। এখান থেকেই কিছুটা বিড়ম্বনার শুরু। রাজ্য কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলছেন, “হরিণ নিতে চেয়ে যাঁরাই আবেদন করছেন, তাঁরাই তাকে নিয়ে বাড়ি যেতে চাইছেন। দত্তকের অর্থ যে, সেটা নয় তা শুনে আবার দমে যাচ্ছেন।” এঁদের মধ্যেই জনা কয়েককে বিষয়টা বোঝানো সম্ভব হয়েছে। বাকিরা এখনও নিমরাজি। তাঁরা এখনও বাড়ি নিয়ে গিয়েই হরিণ পুষতে চান। বাস্তব পরিস্থিতিটা কী, তা আপাতত তাঁদের বোঝানোর পালা চলছে। ২৩ জনের মধ্যে বাকি ১১ জনের সিংহভাগকেই বোঝাতে তাঁরা সফল হবেন বলে দাবি দফতরের এক কর্তার।
কিন্তু এভাবে পশুপাখি দত্তক নেওয়ার কারণ কী? বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এখন তো চিড়িয়াখানা বন্ধ। তাই মানুষের মধ্যে যাতে পশুপাখি নিয়ে উৎসাহ না হারায় তাই এই দত্তকের ভাবনা। এই ধরনের প্রক্রিয়া মাঝেমাঝেই চলে। তাতে সংরক্ষণ নিয়ে মানুষের মধ্যেও বার্তা পৌঁছয়।” তবে মানুষকে আগ্রহী করে তাঁদের পশুপাখির দায়িত্ব নেওয়ার কাজ খুব ভালভাবে করছেন বলে আলিপুর চিড়িয়াখানা ও শিলিগুড়ি সাফারি পার্কের জু এডুকেটর কিংবা জু বায়োলজিস্টদের কৃতিত্ব দিয়েছেন বন কর্তারা।