অর্ণব আইচ: বাংলাদেশে অশান্তি শুরুর আগে থেকেই রাজ্যে নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা জঙ্গি সংগঠন ‘হাট’-এর। গত মে মাসে জঙ্গি সংগঠন ‘হিজবুত তাহরির’-এর দুই সদস্য বাংলাদেশ থেকে এই রাজ্যে এসে মগজ ধোলাই তথা নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর। এ ছাড়াও তারা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় স্লিপার সেল তৈরিরও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর, ওই দুই জঙ্গি সদস্য নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়ে রীতিমতো পাসপোর্ট নিয়েই প্রবেশ করেছিল রাজ্যে। মাত্র কয়েকদিনে একাধিক জেলায় তারা কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ভোপাল-সহ দেশের কয়েকটি জায়গা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় ‘হাট’ বা ‘হিজবুত তাহরির’-এর জঙ্গি সদস্যরা। তাদের নজরে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ও সুশিক্ষিত যুবকরা। তাঁদের মগজ ধোলাই করার চেষ্টা হচ্ছিল। তখন এই রাজ্যে তারা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেনি। তাই গত মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ‘হাট’-এর দুই সদস্যকে পাসপোর্ট দিয়ে এই রাজ্যে পাঠায় তাদের বাংলাদেশের ‘আমির’।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই দুই জঙ্গির নাম আমির সাব্বির ও রিদওয়ান মারুফ। দুজনই বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। গত ২৩ মে মালদহের মোহদিপুর সীমান্ত পেরিয়ে আসে আমির ও রিদওয়ান। এখানে আসার আগে সোশাল মিডিয়ায় তাদের সঙ্গে মালদহের বৈষ্ণবনগরের এক যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসা ওই দুই যুবক বৈষ্ণবনগরের ওই যুবকের বাড়িতে যায়। নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দেওয়া দুই যুবক মালদহের কয়েকটি এলাকায় যায়। কয়েকটি জায়গায় গিয়ে তারা বৈঠক করে। এর পর তারা দুজনই পৌঁছয় মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে। সেখানে দুজন গ্রামের যুবকদের সঙ্গে বৈঠক করে। ধুলিয়ানে বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা ওই যুবকের মামার বাড়ি। সেখানেও তার বন্ধুরা রয়েছে। আমির ও রিদওয়ানের সঙ্গে সে তার বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ওই যুবককে শনাক্ত করেন। তাঁরা জানতে পারেন যে, ধর্মীয় বিষয় দিয়ে দুজন আলোচনা শুরু করে। কিন্তু ক্রমে বৃহত্তর বাংলাদেশের বিষয়ও ওই যুবকদের কাছে তুলে ধরে দুই জঙ্গি।
এদের মধ্যে আমির ‘হাট’-এর একজন নেতা ও সংগঠক। তার সঙ্গে এই দেশেরও কয়েকজন ‘হাট’-এর জঙ্গি নেতার যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে। অন্য জঙ্গি সদস্য রিদওয়ান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ‘হাট’-এর কর্মী। বৈষ্ণবনগরের ওই যুবকের পরিবারও ‘সিমি’র সঙ্গে একসময় সরাসরি যুক্ত ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। তাঁদের মতে, আরও কয়েকজন জঙ্গি সদস্যও এই রাজ্যে এসেছে। তাদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।