কৃষ্ণকুমার দাস: জাদুকন্যাদের পাণিপ্রার্থী আইএএস ও আইপিএস, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে বিদেশি-কর্পোরেট ও শিল্পগোষ্ঠীর তরুণ মুখের ঢল 'ইন্দ্রজাল'-এ। প্রতিদিনই মুহুর্মুহু ফোন আসছে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে দেওয়া তিনটি মোবাইল নম্বরে। হোয়াটসঅ্যাপে এত হাজার হাজার বায়োডাটা ঢুকছে যে, ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট নিতে হিমশিম খাচ্ছেন জাদুসম্রাটের অফিসকর্মীরাও। পাত্রদের আবেদনের স্রোত সামাল দিতে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত সহকারী নিয়োগ করেছেন পি সি সরকার জুনিয়র।
অনেকেরই মনে সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, ‘জাদুকন্যা’দের বিয়ে করার, কিন্তু সাহস নিয়ে বলতে পারছিলেন না। কেউ আবার লজ্জায় কুঁকড়ে ছিলেন। তবে বিজ্ঞাপন প্রকাশ হতেই সেই লজ্জা ও ভয় কেটে যাওয়ায় ‘বাঁধ ভাঙা বন্যার জল’-এর মতো হাজার হাজার বায়োডাটা ঢুকছে জাদুজালে। আর আবেদন পাঠিয়েই পাত্রদের ভাবখানা এমন, পারলে ‘স্বয়ম্বর সভা’র আগে আজই মানেকা, মৌবনি ও মুমতাজকে বউ করে ঘরে তুলে নিয়ে যাবেন।। জাদুসম্রাটের কথায়, ''ওদের গলার আর্তি শুনে মনে হচ্ছে, তর সইছে না!'' তবে জাদু-পরিবার যে এত সহজে ও তড়িঘড়ি কন্যাদের পাত্রস্থ করবে না, তা জেনেও এত হাজার হাজার আবেদনপত্র কাদের? পাত্রই বা কারা? পরিচয় বা পেশা কী তাঁদের?
পর পর দুই প্রশ্ন শুনেই ধোনির হেলিকপ্টার শটের স্টাইলে ফ্রন্টফুটে খানিকটা এগিয়ে এসে সপাটে ব্যাট চালানোর ভঙ্গি জাদুসম্রাটের কথায়। এক নিশ্বাসে পি সি সরকার জুনিয়র বললেন, ‘‘ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কর্পোরেট কর্তা, অধ্যাপক-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে, পরামর্শদাতা (কনসালট্যান্ট) থেকে শুরু করে শিল্পজগতের মানুষরাও আছেন। প্রবাসী পাত্রও এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এরই মধ্যে ৮ জন আইএএস ও আইপিএস পাত্র আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। আরও অনেকে পাঠাচ্ছেন। আনন্দের বিষয় হল, পাত্ররাই নিজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই যোগাযোগ করেছেন।’’
এক পাত্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে চমকে দিয়েছেন জাদুসম্রাট। বললেন, "বয়সে বড় পাত্রীকেও বিয়ে করতে চেয়ে কমবয়সি ছেলের আবেদন জমা পড়েছে।" এর পরই হাসির ফোয়ারা ভরিয়ে অট্টহাস্য জাদুকরের, "সাহস আছে বলুন!" কীভাবে হবে বাছাই? কাকে পাত্র চান জাদুসম্রাটজায়া জয়শ্রী? স্ত্রীর উপর প্রাথমিক বাছাইয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিন কন্যার বাবার উচ্ছ্বাস। উচ্চকিত হাসি নিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, "মেয়েদের পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রে আমার চেয়ে অনেক ভালো জামাইদের খুঁজে বের করতে পারবেন। কারণ, উনি আমাকে বাছাই করেছিলেন।"
জানা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসের প্রথমে স্বামী-স্ত্রী, দুজনে বসে আবেদনপত্রের পাহাড় ঘেঁটে প্রথম দফায় তালিকা তৈরি করবেন। তার পর সেই তালিকা নিয়ে বসবেন মেয়েরা। এরপর তিন মেয়েকে নিয়ে একসঙ্গে বাবা-মা বসে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে তবেই স্বয়ংবর সভা ডাকা হবে। আর তিন কন্যার বিয়ে একদিনে এক ছাদনাতলাতেই হবে বলে জানিয়েছেন জাদুসম্রাট। আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাত্ররা আবেদন জমা করতে পারবেন বলে বুধবার জানিয়েছেন তিন কন্যার গর্বিত বাবা। তারপর আবেদনের এই গন্ধমাদন থেকে ঝাড়াই বাছাই শেষে বিশল্যকরণী 'সুযোগ্য পাত্র' খুঁজে বের করতে নামবেন পি সি সরকার ও জয়শ্রী সরকার।
কেমন পাত্র বেশি পছন্দ? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগে উত্তর দেন কনের বাবা। বলেন, "বউয়ের পছন্দ উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে। সব মা চান, মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযোগ্য পাত্রের ঘরণি হোক। কিন্তু আমি আবার একটু বিজনেস-কর্পোরেট পাত্র ভালোবাসি। দেখা যাক, কী আছে কপালে। তবে মেয়েরা কী চায়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।" হাজার কয়েক আবেদনকারীর মধ্যে কাউকে কি পছন্দ হয়েছে? প্রশ্ন শুনে অভিনেত্রী-জাদুকন্যা মৌবনির নির্লিপ্ত জবাব, "পুরোটাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব। ওরা আমাদের পৃথিবীতে এনেছেন, ওরা লালন-পালন করে বড় করেছেন, তাই ওই দু'জন সবচেয়ে ভালো বুঝবেন কারা আমাদের যোগ্যতম হবেন।" তবে এই স্বয়ংবর এবং পাত্রদের বাছাই করার ব্যপারটা যে বাবা-মায়ের উপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে, তা এদিন স্বীকার করে নেন মৌবনি। তবে তিন মেয়ে একসঙ্গে পরের ঘরে চলে যাবে ভেবে এখন থেকেই মনখারাপ জাদুসম্রাটের। স্রেফ ছোট মেয়ের আদুরে জীবনশৈলীর ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, "মৌবনি এতটাই স্পর্শকাতর যে, কেউ ওকে কিছু বললেই ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। ভাবছি, কী যে হবে আমার মেয়েদের।" মমত্বের বেড়াজালে আটকে আপাতত গভীর চিন্তায় তিনকন্যার বাবা।