সৌরভ মাজি, বর্ধমান: চাকরির বাজারে ধস নতুন কোনও কথা নয়। যত না শূন্যপদ, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আবেদনকারীর সংখ্যা। আবার কোনও কোনও সংস্থার তরফে আবেদনের শর্ত থাকে কঠিন। সেসব পেরিয়ে কেউ কেউ নিজের যোগ্যতায় চাকরি পান। কিন্তু কোনও সংস্থা কি জাতিগত (Caste) শর্তের ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করতে পারে? তা বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কিন্তু এক জনপ্রিয় চাকরির ওয়েবসাইটে এমন বিজ্ঞাপন বিতর্কের জন্ম দিল। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কলকাতার (Kolkata) চাকরি, অথচ আবেদন করতে পারবেন না কোনও বাঙালি। তা বেশ বড় বড় করেই লেখা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনে। হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা।
এক জনপ্রিয় চাকরির ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বেশ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media)। তাতে দেখা যাচ্ছে, এক ইস্পাত তৈরির (Steel plant) সংস্থা কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কলকাতায় চাকরি, সেই অনুযায়ী বেতন কাঠামো ঠিক করা হয়েছে, তার উল্লেখও আছে বিজ্ঞাপনে। অথচ লেখা, আবেদন করতে পারবেন শুধু অবাঙালিরা, বাঙালি (Bengali) হলে আবেদন করা চলবে না। ব্যস, এটুকুই কলকাতার চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
কালনার বাসিন্দা কিরণময় মণ্ডল। তিনি চাকরির সন্ধান করছেন। ওই বিজ্ঞাপন (Advertisement) দেখে হতাশা চেপে রাখতে পারেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওটা উচ্চ বেতনের চাকরির বিজ্ঞাপন। কিন্তু বাংলার ছেলেমেয়েরা আবেদন করতে পারবে না। এটা ঠিক নয়। এতে এখানকার ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হবে। সংস্থার বিশেষ কোনও চাহিদা থাকলে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে দিতে পারত। এভাবে সম্প্রদায়গত বিভাজন না করে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত ছিল।”
[আরও পড়ুন: থরে থরে সাজানো ২ হাজার টাকার বান্ডিল, এবার খড়দহে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা]
এমনিতেই বাঙালি (Bengali) বিদ্বেষ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের বদনাম রয়েছে। বাংলায় থেকেও তাঁরা অবাঙালি সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, শাসকদলের তরফে এমন অভিযোগ উঠেছে বহুবার। এই বিজ্ঞাপন ঘিরেও সেই রাজনৈতিক রং লেগেছে। তৃণমূলের (TMC) রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “খুব অন্যায়। বাঙালির ভাবাবেগের উপর আঘাত করা হয়েছে। সংস্থার বিশেষ চাহিদা থাকতেই পারে চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র অবাঙালিই সুযোগ পাবে! বাঙালি যোগ্য নয় আবেদনের জন্য, সেটা হতে পারে না। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেসরকারি সংস্থায় একজন বাঙালি ছেলে-মেয়ে চাকরি পাবে না, শুধুমাত্র সে বাঙালি বলে – এটা হতে পারে না।”
[আরও পড়ুন: ইডি-সিবিআই তদন্ত মানেই সময় নষ্ট! চিটফান্ড মামলায় চাঞ্চল্যকর পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের]
অবশ্য এ বিষয়ে একই সুর শোনা গেল বিজেপির (BJP) বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের গলায়ও। তিনি বলেন, “যে সংস্থাই দিয়ে থাকুক ওইরকম চাকরির বিজ্ঞাপন ঠিক নয়। বাঙালি ছেলেমেয়েরা আবেদন করতে পারবে না উল্লেখ করে বাঙালির ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছে। বাংলায় কাজের জন্য বাঙালি ছেলেমেয়রা অগ্রাধিকার পাক সেটাই কাম্য।”