মণিশংকর চৌধুরী: লাল, নীল, সবুজ। রবিবার ঐতিহাসিক ‘রঙিন’ ব্রিগেড দেখল কলকাতা। থুড়ি, গোটা রাজ্য। কংগ্রেসের কথা ছেড়েই দিলাম। ‘লালঝান্ডা’র পাশে নজর কেড়েছে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ-এর পতাকা। পীরজাদার টানে ব্রিগেড ভরিয়েছেন তাঁর সমর্থকরাও। আব্বাসের আবেদন ছুঁয়ে গিয়েছে ডায়মন্ড হারবারের বিশেষ ভাবে সক্ষম এক সমর্থককেও। তাঁর মুখে একটাই নাম, একটাই স্লোগান, ”ভাইজান মুখ্যমন্ত্রী হোক, ইনশাল্লাহ’।
[আরও পড়ুন: ‘লুঠপাট-জাতপাতের নয়, বাংলায় চাই জনহিতের সরকার’, ব্রিগেড থেকে ‘বদলের’ ডাক ইয়েচুরির]
স্মরণকালের মধ্যে ব্রিগেডের এই চেহারা আগে কখনও দেখা যায়নি। রাজ্যের সব রাজপথ এসে মিশেছিল ব্রিগেডে। লাল ঝান্ডাধারী সমর্থকদের পাশাপাশি হাজার হাজার আইএসএফ সমর্থকদেরও ভিড় রবিবাসরীয় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। ব্যক্তি বিশেষের পরিচয় এখানে গুরুত্বহীন। কারণ, পীরজাদার সমর্থকরা যে ‘মৌমাছির চাকের’ মতো সংঘবদ্ধ, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল। মঞ্চে তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন অধীর চৌধুরী। এরকমই এক মুহূর্তে মঞ্চে প্রবেশ ‘ভাইজান’-এর। তাঁকে দেখামাত্রই ‘ভাইজান, ভাইজান’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কেঁপে যাওয়ার মতো অবস্থা। আর সেই গগনভেদী শব্দে ক্ষেপে গিয়ে বক্তৃতা থামিয়ে প্রায় মঞ্চ ছেড়েই দিচ্ছিলেন পোড় খাওয়া নেতা অধীর চৌধুরী। অবশেষে সেই আগুনে জল ঢাললেন বামফ্রন্ট নেতা বিমান বসু। সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, আইএসএফ কাঁটায় বিদ্ধ কংগ্রেস। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেও এখন পর্যন্ত ‘নিরপেক্ষ’ আব্বাসের সঙ্গে আসনরফা নিয়ে বিবাদ মেটেনি কংগ্রেসের। সিপিএম অবশ্য আশা জাগালেও ফিকে ঝান্ডার রং ‘কমরেডদের বুকের রক্তে’ আদৌ ফিরবে বলে মনে হয় না।
উল্লেখ্য, বাম-কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড সমাবেশে এবার নতুন সঙ্গী ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)। ফলে তাঁদের সমর্থকও প্রচুর। বঙ্গের ভোটে সদ্যগঠিত দলের জনপ্রিয়তা যে কতটা, তা বোঝা গেল এই সমাবেশেই। মঞ্চে ভাষণ রাখতে গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddique) সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন। কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই তিনি বললেন, ”নারীদের স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে মমতা। আমরা স্বাধীনতা ফেরানোর যুদ্ধে নেমেছি। রক্ত দিয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। মমতাকে জিরো করে দেব।”
তাই বলাই যায় এদিন ‘সংযুক্ত মোর্চা’র ‘সূর্যকান্তমণি’ যে আব্বাস সিদ্দিকি, তা বুঝতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন সমীকরণ মেনে হয় না। তবুও তর্কের খাতিরে যদিও বা বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ-এর ‘সংযুক্ত মোর্চা’ ক্ষমতায় আসে তাহলে অভ্যন্তরীণ কলহে কতদিন সেই সরকার চলবে তা সময়ই বলবে।
[আরও পড়ুন: ‘মমতাকে জিরো করে দেব’, ব্রিগেড থেকে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ জয়ের হুঙ্কার আব্বাসের]
দেখুন ভিডিও: