অর্ণব আইচ: শুধু ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে দেশজুড়ে ১৮০ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ। এর থেকে বাদ পড়েনি কলকাতাও। এই শহরের বাসিন্দাদের টাকা হাতানোর অভিযোগে দিল্লি ও বেঙ্গালুরু থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবার ওই ধৃতকেই নিজেদের হেফাজতে নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ডিজিটাল অ্যারেস্ট বা ডিজিটাল গ্রেপ্তারির সাইবার প্রতারণায় এটাই এই রাজ্যে ইডির প্রথম মামলা। তাতেই কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার হাতে ধৃত চিরাগ কাপুর ও যোগেশ দুয়াকে এবার নিজেদের হেফাজতে নিল ইডি।
ইডির এক আধিকারিক জানান, সারা দেশজুড়ে ১৮০ কোটি টাকার অনেক বেশিই প্রতারণা করেছে তারা। এই দুই মাথার সঙ্গে চক্রের অন্য সদস্যরাও সরাসরি যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ ইডির। ইডির দাবি, সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে বিভিন্ন থানায় এই চক্রটির বিরুদ্ধে অন্তত ৯০০টি মামলা রয়েছে। চিরাগ ও যোগেশ, দু’জনই জেলবন্দি ছিল। শুক্রবার তাদের নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে হাজির করা হয়। ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, "সারা দেশে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে তারা প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে। তাই তাদের ইডি হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন। তাদের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।" দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে চিরাগ ও যোগেশের প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের টাকার লেনদেন ও সম্পত্তি নিয়েই চলছে তদন্ত। তাদের কাছে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা রয়েছে, এমনই অভিযোগ উঠেছে। কোন পথে এই টাকার লেনদেন? এবার সেই তদন্ত শুরু করছে ইডি। ধৃত চিরাগ ও যোগেশ ছাড়াও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, একাধিক ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করবেন ইডি আধিকারিকরা।
ইডি ও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই ডিজিটাল গ্রেপ্তারির চক্রের সদস্যরা কখনও নিজেদের পুলিশ, কখনও বা সিবিআই পরিচয় দিয়ে ফোন করে দাবি করত তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে। টাকা না দিলে তাঁকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হত। তাদের মোবাইল নম্বরে পুলিশ বা সিবিআইয়ের ডিপি থাকত। গল্ফগ্রিনের এক মহিলার কাছ থেকে এভাবে ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে ৪৭ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছিল প্রতারকরা। তদন্ত শুরু করে লালবাজারের সাইবার থানার গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা গিয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। সেই সূত্র ধরেই আনন্দপুর, পাটুলি ও নরেন্দ্রপুরে তল্লাশি চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোট ১০৫টি ব্যাঙ্কের পাসবই, ৬১টি মোবইল, ৩৩টি এটিএম কার্ড, ১৪০টি সিম কার্ড, ৪০টি জাল সিল, ১০টি লিজের চুক্তি উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরেই বেঙ্গালুরু থেকে চিরাগ কাপুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জেরা করে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার হয় ওঙ্কার সিং। ওই ব্যক্তিকে জেরা করেই দিল্লিতে হানা দিয়ে পুলিশ বিবেক বিহার থেকে যোগেশ দুয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৭ টাকা নগদ ও প্রচুর বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। যোগেশের ভাই আদিত্যকেও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে ইডি।