অর্ণব আইচ: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! শিশু নিখোঁজের তদন্তে নেমে বড়সড় শিশু পাচারচক্রের হদিশ পেল আনন্দপুর (Anandapur) থানার পুলিশ। খোদ শিশুর মা-ই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত! তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে এল বিস্ফোরক সমস্ত তথ্য। যা শুনে চোখ কপালে দুঁদে তদন্তকারীদেরও। একে একে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হল ৬ জন। তার মধ্য তিনজনই দালাল। তবে শিশু পাচার চক্রের (Child trafficking) জাল আরও কতদূর বিস্তৃত, তা জানার অপেক্ষায় তদন্তকারীরা।
আনন্দপুরের নোনাডাঙার বাসিন্দা রুপালি মণ্ডল ২১ দিন আগে এক কন্যাসন্তানের (Daughter) জন্ম দেন। কিন্তু তারপর থেকে আর দেখা যাচ্ছিল না বাচ্চাটিকে। প্রতিবেশীরা রুপালিকে জিজ্ঞাসা করে কোনও সদুত্তর পাননি। তখন তাঁদের সংশয় হওয়ায় পুলিশের দ্বারস্থ হন। বাচ্চাটি নিখোঁজ (Missing), তা জানিয়ে খুঁজে দেওয়ার কথা বলেন। সেই তদন্তে নেমে পুলিশ রুপালিকে আটক করে জানতে চায়, সদ্যোজাত কন্যা কোথায়? রুপালির সমস্ত অসংলগ্ন জবাব শোনার পর চাপ দিতে বেরিয়ে আসে আসল কথা। জানা যায়, পাটুলির রূপা দাস নামে এক মহিলার কাছে ৫০ হাজার টাকায় মেয়েকে বিক্রি (Sell) করেছে সে।
[আরও পড়ুন: রাজ্য কি জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে? বিধানসভায় জবাব দিলেন ব্রাত্য বসু]
রূপা দাসের খোঁজ করতে গিয়ে আরও দীর্ঘ হয় এই জাল। একে একে তিনজন দালালের খোঁজ মেলে। স্বপ্না সর্দার, পূর্ণিমা কুণ্ডু, লালতি দে নামে তিনজনের কাছে হাতবদল হয়ে শেষমেশ ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয় ২১ দিনের শিশু। তাকে কিনে নেন পর্ণশ্রী (Parnasree) থানা এলাকার কল্যাণী গুহ নামে মহিলা। তার কাছেই আপাতত ছিল শিশুকন্যা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্য কি জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে? বিধানসভায় জবাব দিলেন ব্রাত্য বসু]
জানা গিয়েছে, জেলা থেকে এভাবে শিশুদের পাচার করে এনে রাখা হত কলকাতার একটি জায়গায়। সেখানে ভাড়া বাড়িতে চলত শিশু বিক্রির চক্র। কলকাতার বিভিন্ন আইভিএফ সেন্টারগুলি ছিল পাচারকারীদের টার্গেট। যেখানে নিঃসন্তান দম্পতিরা আসতেন সন্তান ধারণের উপায় খুঁজতে। তাঁদের কাছে গিয়ে এই দালালরা সহজে সন্তান পাওয়ার ‘টোপ’ দিত। ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার প্যাকেজের বিনিময়ে অনেকেই রাজি হয়ে যেতেন। এরপর তাঁরাও সেই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন ৮,৯ মাস এবং সন্তান কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। বিষয়টির নেপথ্যে যে এত বড় দালালচক্র সক্রিয়, তা টের পাওয়ার উপায় ছিল না। কিন্তু রূপালি মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে গোটা চক্রের হদিশ পেল পুলিশ। এই চক্র আরও কতদূর বিস্তৃত? তার খোঁজ চলছে।