অর্ণব আইচ: উৎসবের মরশুমে কলকাতায় দাপট ‘বাইকার গ্যাং’ বা ‘লোন উলফ’দের। পরপর একাধিক ঘটনায় বাইক নিয়ে কেউ বা দল বেঁধে, আবার কেউ একাই করেছে লুঠপাট। পুজোর দিনগুলিতে বাইক নিয়ে লুঠপাটের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই সতর্ক লালবাজার। লালবাজারের কর্তারা থানা ও ট্রাফিক গার্ডগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন, পুজোর আগেই সারাতে হবে প্রত্যেকটি সিসিটিভি ক্যামেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত মাসে কলকাতার দু’টি জায়গায় পরপর ঘটেছে বাইক নিয়ে লুঠপাটের মতো অপরাধ। ময়দান এলাকায় স্কুটি নিয়ে খিদিরপুর রোড থেকে রেড রোড হয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর কাছে ছিল সাড়ে আট লাখ টাকা। দু’টি বাইকে করে চার যুবক একই গতিতে এসে স্কুটিটিকে ধাক্কা দিতে উদ্যত হয়। তারা স্কুটিটির গতি কমাতে বাধ্য করে। রীতিমতো বাইক থেকে নেমে অস্ত্র দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে সাড়ে আট লক্ষ টাকা লুঠ করে পালায় তারা। কিন্তু সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের বাইক শনাক্ত করা যায়নি।
[আরও পড়ুন: বাংলার সংগঠন নিয়ে ‘অসন্তুষ্ট’, পদ্মশিবিরের গোড়ায় গলদ খুঁজতে আসছেন বনসল-সতীশ]
খিদিরপুরের (Khidirpore) এক যুবক সব ধারের টাকা ফেরত দিচ্ছে। কিছুটা বিলাসবহুল জীবনযাপনও করছে। সেই খবরের সূত্র ধরেই লালবাজারের গোয়েন্দারা প্রথমে ওই যুবক ও তারপর গ্যাংয়ের আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেন। কিছুদিন আগে দক্ষিণ কলকাতার বেকবাগানের কাছ দিয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলেন এক ব্যবসায়ী যুবক। তাঁর শরীরে ছিল বেশ কিছু সোনার গয়না। বাইকে করে এক দুষ্কৃতী এসে তাঁর কাছে দাঁড়ায়। তাঁকে ছুরি দেখায় অভিযুক্ত। এর পর তাঁর কাছ থেকে সোনার বালা লুঠ করে বাইকের গতি বাড়িয়ে পালায় সে। যদিও বাধা পেয়ে অন্য গয়না লুঠ করতে পারেনি সে। এই ব্যাপারে প্রথমে অভিযোগকারী বেনিয়াপুকুর থানায় যান। পরে শেক্সপিয়ার সরণি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এই ক্ষেত্রেও সিসিটিভির ফুটেজে বাইকটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তার সন্ধানে তদন্ত শুরু করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
তাই উৎসবের আগেই শহরে বাইক নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে একাধিক লুঠের ঘটনায় পুলিশকে আরও সতর্ক হতে বলেছেন লালবাজারের (Lal Bazar) কর্তারা। পুলিশ আধিকারিকদের মতে, এবার পুজোয় রাস্তায় বাড়বে মানুষের ভিড়। মহিলারা গয়না পরবেন। পুজোর (Durga Puja) সময় রাতের শহরে যাতে বাইক আরোহী অপরাধীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে, তার জন্য এখন থেকে থানা ও গোয়েন্দা বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে লালবাজার। বাইক নিয়ে ছিনতাই বা লুঠপাটে যারা আগেও ধরা পড়েছিল, তাদের কার্যকলাপের উপর নজর দেওয়া শুরু হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও মোড়গুলিতে নাকা চেকিং বাড়ানো হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ভয়াবহ হামলা কানাডায়, ছুরির আঘাতে অন্তত ১০ জনকে খুন দুই সন্ত্রাসবাদীর!]
যদি কোনও অপরাধ ঘটেও যায়, অপরাধী ও তাদের বাইক শনাক্ত করতে সিসিটিভির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আমফানের পর থেকেই ট্রাফিক পুলিশ ও থানার সিসিটিভি বিকল হয়েছে। এখনও সবগুলি মেরামতি করা যায়নি। অন্যান্য কারণেও বিকল হয়েছে ক্যামেরা। প্রত্যেক থানা ও ট্রাফিক গার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুজোর আগেই সারাতে হবে সব সিসিটিভির ক্যামেরা। বেসরকারি উদ্যোগে যে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, সেগুলি বিকল হলেও পুলিশের পক্ষে সারানোর অনুরোধ জানাতে বলা হয়েছে।