রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের বেহাল অবস্থা। তার উপর ভরসা না রেখে এবার ভোট ময়দানে নামছে আরএসএস (RSS)। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবিরের উপর সম্পূর্ণ আস্থা নেই সংঘের। তাই লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election) বিজেপি কর্মীদের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে গোপনে কাজ করবে আরএসএসের পৃথক বাহিনী। লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে জানুয়ারি মাস থেকেই দিল্লির (Delhi) নির্দেশে কাজ করবে সংঘ। এই বাহিনী বিজেপি নেতা-কর্মীরা এলাকায় ভোটের কী কাজ করছে সেদিকেও নজর রাখবে।
গোপন রোড ম্যাপ তৈরিও হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে পরিষ্কার হাতে গোনা তিন থেকে চারটে আসন ছাড়া এ রাজ্যে কোনও লোকসভা কেন্দ্র নিয়েই নিশ্চিত নয় বিজেপি (BJP)। আর এই সমীক্ষা রিপোর্ট পাওয়ার পরই আরএসএস-কে মাঠে নামতে হচ্ছে। গোপন বৈঠকে আরএসএস এর যে রোড ম্যাপ তৈরি হয়েছে –
১) বুথ ধরে জনমত যাচাই করা হবে। রিপোর্ট নেওয়া হবে, কোন বুথে কী অবস্থা।
২) বুথ ও এলাকা ধরে স্বয়ংসেবক নিয়োগ করা হবে। যাঁরা রিপোর্ট দেবেন নির্দিষ্ট দায়িত্বে থাকা নেতাদের।
৩) নির্দল প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যাদের এজেন্ট হবে সংঘের লোক।
৪) এলাকায় বিজেপি কোথায়, কী প্রচার করছে, লোক কেমন হচ্ছে, সেই রিপোর্ট নেওয়া হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজেপিকে পরামর্শ দেবে এই বাহিনী।
৫) এই বাহিনী প্রচার করবে মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের। ছোট ছোট সভা করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের প্রচার চলবে।
৬)হিন্দুত্বের প্রচারে থাকবে রামমন্দির।
৭) ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসাও লক্ষ্য। আরএসএসের পাশপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ সমস্ত সংগঠন ছোট ছোট সভা করবে। সভায় মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) ভাষণ শোনানো হবে।
[আরও পড়ুন: ‘ফের জওয়ানদের আত্মত্যাগ নিয়ে রাজনীতি!’, পুঞ্চ হামলায় কেন্দ্রকে খোঁচা বিরোধীদের]
এছাড়া, লোকসভা ভোটের প্রচারে বাংলায় মোদি, অমিত শাহদের জনসভায় গোটা সংঘ পরিবারের সব সংগঠন লোক জমায়েত করবে। সূত্রের খবর, বিজেপির সঙ্গে সমান্তরালভাবে নীরবে কাজ করবে আরএসএসের এই বাহিনী। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতার কথায়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়েও এইভাবে কাজ করেছে আরএসএস। যদিও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলাদা। এখানে আরএসএসের এই নয়া কৌশল আদৌ কোনও কাজ দেবে কি না, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই সংশয় ও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের যা নড়বড়ে অবস্থা, গোষ্ঠীকোন্দল, তাতে আরএসএস যতই কৌশল প্রয়োগ করুক না কেন, সফল হওয়া কঠিন। আদি বিজেপি নেতাদের মতে, তৃণমূলের মজবুত সংগঠন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) জনপ্রিয়তার সঙ্গে লড়াইয়ে পারবেন না রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতারা। কারণ, দলের সংগঠনই তো শক্তিশালী নয়। শুধু দিল্লি নির্ভরতায় কোনও কাজ হবে না।