সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুবভারতীতে মেসি বিড়ম্বনায় বিজেপি নেতাদের সুরে সুর মেলালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল বলছেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য একদিকে যেমন আয়োজকরা দায়ী, তেমনই দায়ী পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। রাজ্যপালের দাবি, আগে থেকেই রাজ্য প্রশাসনকে ভিড় নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুবভারতীর অনুষ্ঠান মসৃণভাবে করার কোনও ব্যবস্থা প্রশাসন করেনি।
যুবভারতীতে ‘ঈশ্বর’ দর্শনের আশায় মাঠে আসা আকুল ভক্তরা সেভাবে দর্শনই পেলেন না মেসির। যেটুকু সময় মেসি মাঠে ছিলেন, সেটার বেশিরভাগ সময়ই তাঁকে ঘিরে ছিল ভিআইপি, নিরাপত্তারক্ষী এবং আয়োজকদের ঘনিষ্ঠদের ভিড়। তাতেই আবেগের বিস্ফোরণ দর্শকদের। এই বঞ্চনার যন্ত্রণা অসহনীয়। তাতেই হয়তো স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারালেন পাগলপারা দর্শক। মেসি কলকাতায় (Messi In Kolkata) সব মিলিয়ে থাকার কথা ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। অথচ সেই কয়েক ঘণ্টাতেই গুচ্ছখানেক কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সকালে মূর্তি উন্মোচন, হোটেলে আলাপচারিতা, মাঠে ঢুকে গোট কনসার্ট, প্রাক্তনদের খেলা দেখা, স্পনসরদের দাবি মেটানো, ভিআইপিদের আবদার মেটানো। এসবের মধ্যে খাওয়া দাওয়া, ভক্তদের সঙ্গে করমর্দন, ছবি তোলা (সেসবের জন্য আবার আলাদা রেট চার্ট ঠিক করা হয়েছিল)। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মানুষের পক্ষে মাত্র ওই কয়েক ঘণ্টায় এত কিছু আদৌ সম্ভব? আসলে এই সফরের শুরু থেকেই দর্শকের আবেগের দিক থেকে ব্যবসায়িক দিকটা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল। টিকিট মূল্য থেকে শুরু করে কর্মসূচি নির্ধারণ- সবটাই করা হয়েছিল ব্যবসায়িক দিককে মাথায় রেখে। দেখা করার জন্য টাকা, হাত মেলানোর জন্য টাকা, ছবি তোলার টাকা, হাজার হাজার স্পনসর, ভিআইপিদের থেকে সুবিধা নিয়ে দেখা করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, কী করেননি আয়োজক!
এই পুরো আয়োজনের দায়িত্ব ছিল বেসরকারি সংস্থার হাতে। ফলে এই অব্যবস্থার দায়ও নিতে হবে তাঁদেরই। তবে রাজ্যপাল মনে করছেন, আয়োজকরা যতটা দায়ী, ততটাই ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন। বিবৃতিতে রাজ্যপাল বলছেন, "রাজ্যের মানুষ, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশকর্মীকে ব্যর্থ করে দিয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। আজ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য কালো দিনের সাক্ষী থাকতে হল কলকাতাকে।" লোকভবনের তরফে জানানো হয়েছে, একদিন আগেই রাজ্যপাল মেসির অনুষ্ঠানের অব্যবস্থা নিয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন। সেই অভিযোগগুলি পুলিশকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু তারপরও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।" রাজ্যপালের দাবি, পুরো বিষয়টির বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি। স্টেডিয়ামের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে আয়োজকদের জরিমানা করতে হবে, দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার দর্শকদের সব টাকা ফেরাতে হবে এবং আয়োজকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।"
ঘটনাচক্রে রাজ্যপাল যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন, সেগুলির অধিকাংশই ইতিমধ্যে করা হয়েছে। শতদ্রু আটক হয়েছেন। তিনি পুলিশকে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন, আয়োজকদের সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানের দায় সরকারকেই কেন নিতে হবে?
